
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ (THE) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং ২০২৬ প্রকাশ করেছে। এবারের র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ৩,১১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পাওয়া গেছে, যেখানে বাংলাদেশের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ও জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষভাবে ঢাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবার ৮০১ থেকে ১০০০ অবস্থানের মধ্যে অবস্থান করছে এবং আগের বছরের তুলনায় ২০০ ধাপ এগিয়েছে।
র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান
টাইমসের এই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।
৮০১ থেকে ১০০০ অবস্থানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
১০০১ থেকে ১২০০ অবস্থানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
- যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১২০১ থেকে ১৫০০ অবস্থানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
- চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৫০০+ অবস্থানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
- মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স টেকনোলজি (এমআইএসটি)
এর পাশাপাশি, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
র্যাংকিং নির্ধারণের মানদণ্ড
টাইমস হায়ার এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাঙ্ক করার সময় কয়েকটি মূল সূচকের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এগুলো হলো শিক্ষার মান, শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত, গবেষণার মান, সাইটেশন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গবেষণার পরিবেশ সূচকে আগের বছরের তুলনায় ৩ পয়েন্ট, গবেষণার মানে ৯.৩ পয়েন্ট এবং শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতায় ১১.৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি হয়েছে। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি সূচকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৪৫, আর শিক্ষা সূচকে ১৭.৭ পয়েন্ট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবস্থান বজায় রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে গঠিত ১৬ সদস্যের একটি কমিটি র্যাংকিং উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ।
এই কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও পরিচালকসহ অন্যান্য সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছেন।
আন্তর্জাতিক দৃশ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বব্যাপী র্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) এবং যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে প্রিন্সটন ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। টাইমসের এই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যভিত্তিক কিউএস র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের ৫৮৪তম অবস্থানে রয়েছে, যা বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সক্ষম হচ্ছে। তারা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত, গবেষণার মান বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী গ্রহণ এবং শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিবাচক অগ্রগতি দেখাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, এই ধরনের র্যাংকিং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত করার পাশাপাশি গবেষণা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রেরণা জোগাবে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পাওয়ায় দেশের উচ্চশিক্ষার মান ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ মিলেছে। র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতি শিক্ষার মান উন্নয়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে ফুটিয়ে তোলে। ভবিষ্যতে আরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মান অর্জনের পথে এগোতে পারে।
এম আর এম – ১৭১১,Signalbd.com