
দেশে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তবে এই সময়ে মৃত্যুর খবর নেই। শনাক্তের হার ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নতুন করে শনাক্ত ৭ জন, মৃত্যু শূন্য
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরও সাতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্বস্তির খবর হলো, এই সময়ে কারো মৃত্যু হয়নি। বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই সময়ে মোট ২১৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭টি পজিটিভ এসেছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ: কোন জেলায় কতজন শনাক্ত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই রাজধানী ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম বিভাগে একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগেও একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঢাকা শহরের ঘনবসতি ও চলাচলের হার বেশি হওয়ায় সংক্রমণ এখানেই তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের চিত্র: মৃত্যু ২৫, শনাক্ত ৬৫৮
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫৮ জনে। এর মধ্যে বেশিরভাগই রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চল থেকে শনাক্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার ২০৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ হাজার ৫২৪ জন।
পেছনের পরিপ্রেক্ষিত: কোথা থেকে এল নতুন ঢেউ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এটি সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। বিভিন্ন দেশে এখনো নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে, যা থেকে বাংলাদেশও সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ নয়।
তারা বলছেন, গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে ভাইরাসের বিস্তার কিছুটা বাড়তে পারে, বিশেষ করে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, “যদিও সংখ্যায় কম, তবে করোনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। হালকা উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করানো উচিত এবং নিজেকে আলাদা রাখা উচিত যাতে অন্যরা সংক্রমিত না হয়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা গ্রহণ ও সচেতনতা বজায় রাখা এখনো গুরুত্বপূর্ণ। যারা এখনও বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের দ্রুত তা সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনা শনাক্তে কমে গেছে নমুনা পরীক্ষা
এক সময় যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার নমুনা পরীক্ষা হতো, বর্তমানে তা নেমে এসেছে কয়েকশতে। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা মাত্র ২১৭। কম পরীক্ষার পেছনে কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের হার কমে যাওয়া এবং মানুষের মধ্যে আগ্রহ হ্রাস পাওয়া।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গ থাকলে অবহেলা না করে অবশ্যই টেস্ট করানো উচিত, কারণ কম শনাক্ত মানেই সংক্রমণ নেই — এমন নয়।
জনসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে — মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে।
বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা: কি হতে পারে সামনে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সামান্য অসাবধানতায় আবার সংক্রমণ বাড়তে পারে। এর আগে দেখা গেছে, ঈদ কিংবা বড় ধরনের গণজমায়েতের পরেই সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যায়।
তাই সামনের দিনে কোনো বড় উৎসব কিংবা ছুটির সময় যেন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানা হয় — এই আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেও।
শেষ কথা
যদিও দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা বর্তমানে কম, তবুও করোনাভাইরাস এখনো বিদ্যমান। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং অপ্রয়োজনে গুজবে কান না দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ও নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছোট ছোট অসতর্কতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে — তাই এখনই সময় সচেতনতার।
এম আর এম – ০২৫৪, Signalbd.com