
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ‘জেএস (ভোকেশনাল) ও জেডি (ভোকেশনাল) বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা–২০২৫’ প্রকাশ করেছে। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ধরণ, পরীক্ষার নিয়মনীতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং ফি সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এই বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগত উৎকর্ষতা অর্জনের পাশাপাশি প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হওয়ার সুযোগ পাবেন। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে এবং সোমবার সংশ্লিষ্ট তথ্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
বৃত্তির ধরন ও নির্বাচনের পদ্ধতি
নতুন নীতিমালায় দুটি ধরণের বৃত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে—
- ট্যালেন্টপুল বৃত্তি: এটি বিশেষভাবে শিক্ষাগত দিক থেকে উচ্চ দক্ষতা ও প্রতিভা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য।
- সাধারণ বৃত্তি: এটি মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে সাধারণভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের জন্য।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একজন শিক্ষার্থী বৃত্তি পাবে। এছাড়া, ছেলে ও মেয়েদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা সমানভাবে নির্ধারিত থাকবে—প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ করে। যদি কোনো শ্রেণিতে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায়, তবে অপর শ্রেণির শিক্ষার্থী সেই কোটা পূরণ করতে পারবে।
বোর্ডের অধিভুক্ত অষ্টম শ্রেণির সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। শিক্ষার্থীদের নির্বাচন হবে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু একবারের পরীক্ষার উপর নির্ভর করবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল ও সামগ্রিক দক্ষতার ভিত্তিতেই বৃত্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
পরীক্ষার বিষয় ও সময়সূচি
বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ও কারিগরি দক্ষতা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। মোট পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে—
- বাংলা ভাষা
- ইংরেজি ভাষা
- গণিত
- সাধারণ বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (জেএস) অথবা কুরআন মাজিদ (জেডি)
- কর্মমুখী প্রকৌশল শিক্ষা–৩
প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণমান ১০০ নম্বর। মোট ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা তিন ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষার ফি ও অনলাইন প্রক্রিয়া
নীতিমালায় উল্লেখ আছে যে, প্রতিটি পরীক্ষার্থীকে বোর্ড ফি ৪০০ টাকা এবং পরীক্ষা কেন্দ্র ফি ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। এই ফি সংগ্রহ করা হবে সম্পূর্ণভাবে অনলাইনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা ফি সংগ্রহ, প্রবেশপত্র ইস্যু, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করবে।
পরীক্ষা পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন
বৃত্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালায় তিন স্তরের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—
- জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি: সভাপতি থাকবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, এবং সদস্যসচিব হবেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি)।
- নির্বাহী কমিটি: পরীক্ষা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকবে।
- জেলা কমিটি: প্রতিটি জেলা সদর থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে।
প্রতিটি জেলা কেন্দ্রে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য কেন্দ্র সচিব, হল সুপার, ইনভিজিলেটরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিস্তারিত দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, প্রশ্নপত্র প্রেরণ, প্রবেশপত্র ইস্যু, এবং পরীক্ষার পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বোর্ডের অধীনে থাকা সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই নীতিমালা অনুযায়ী বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন সমানভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বৃত্তি পরীক্ষার লক্ষ্য ও গুরুত্ব
এই বৃত্তি পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রতিভা চিনে নেওয়া। বিশেষ করে, দেশের কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণে উৎসাহিত করা এই পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
নতুন নীতিমালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানবে, কোন ধরণের প্রস্তুতি দরকার এবং পরীক্ষার কৌশল কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা অনলাইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রবেশপত্র, ফলাফল, এবং অন্যান্য তথ্য সহজভাবে জানতে পারবে।
সমন্বয় ও কার্যকরী নজরদারি
নীতিমালায় নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি পরীক্ষার কেন্দ্রের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে স্বতন্ত্র সমন্বয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ—প্রশ্নপত্র প্রস্তুতি, বিতরণ, পরীক্ষা পরিচালনা এবং ফলাফল প্রকাশ—সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একজন শিক্ষার্থী বৃত্তি পাবে।
- ছেলে ও মেয়েদের বৃত্তির সংখ্যা সমান।
- পরীক্ষার ফি অনলাইনে প্রদান করতে হবে।
- প্রতিটি বিষয় ১০০ নম্বরের এবং মোট পরীক্ষা ৫০০ নম্বরের।
- পরীক্ষা তিন ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত হবে।
- নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে বৃত্তি পাবে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন এই বৃত্তি নীতিমালা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিভা সনাক্তকরণ, শিক্ষাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি এবং কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীরা এখন আরও সুসংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং তাদের কারিগরি ও শিক্ষাগত ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নীতিমালার মাধ্যমে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক স্তরের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে উঠবে। এছাড়া, প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা সহজে তাদের দক্ষতা এবং কর্মদক্ষতা প্রমাণ করার সুযোগ পাবে।
MAH – 13188 I Signalbd.com