আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না: সূরা আল-হজ্জ (৭৩)
মানবজাতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলা সূরা আল-হজ্জের ৭৩ নম্বর আয়াতে একটি মর্মস্পর্শী উপমা প্রদান করেছেন। এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে মানুষ ডাকেন, তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, যদিও তারা সবাই একত্রিত হয়। এছাড়া, যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, সেটাও তারা উদ্ধার করতে পারবে না। এই আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একত্ব, অন্যায় উপাস্যদের দুর্বলতা এবং মানুষকে আল্লাহর প্রতি অবিচল ভক্তি প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
আয়াতের মূল বক্তব্য
আয়াতে বলা হয়েছে যে, মানুষ যদি আল্লাহর পরিবর্তে যাদের প্রতি তাদের প্রার্থনা ও ভরসা স্থাপন করে, তারা অক্ষম। তারা একত্রিত হলেও একটি সামান্য মাছি পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারবে না। মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যায়, সেটাও তারা ফিরে আনতে পারবে না। এখানে লক্ষ্য করা যায় যে, উপাস্য এবং তাদের পূজারী উভয়ই দুর্বল। আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে মানুষ আহবান করে, তারা নিজেরাও সক্ষম নয়।
এই উপমার মাধ্যমে মানুষকে বোঝানো হয়েছে যে, জীবিত ও জীবন্ত সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে তুলনা করলে মূর্তি, দেবতা বা কোনো মনগড়া উপাস্য কতটা অক্ষম।
ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে মানুষ মূর্তি বা অন্যান্য বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার মনে করে উপাসনা করেছে। তবে আল্লাহর এই আয়াত তাদের শক্তিহীনতা ও অক্ষমতার দিকে নির্দেশ করে। ইবন কাসীর এবং তাফসীরুল কুরআনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই আয়াত মানুষের বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, একমাত্র আল্লাহর প্রতি ভরসা স্থাপন করতে এবং মূর্তি বা বাতিল উপাস্যের অক্ষমতার প্রতি সচেতন করতে অবদান রাখে।
হাদীসে মুসনাদে আহমাদ এবং বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, কেউ যদি আল্লাহর মত সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, সে একটি পিঁপড়া, যব বা মাছি পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারবে না। এই বর্ণনা ইঙ্গিত করে, মানুষ এবং বাতিল উপাস্য উভয়ই সৃষ্টির ক্ষেত্রে কতটা অসহায়।
প্রভাব ও শিক্ষা
এই আয়াত ও হাদীসের মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়:
- আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি: মানুষকে একমাত্র আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও ভরসা স্থাপন করতে বলা হয়েছে।
- উপাস্য ও পূজারীর অক্ষমতা: যাদেরকে মানুষ আল্লাহর অংশীদার মনে করে, তারা সৃষ্টিকর্তা হতে অক্ষম।
- ভক্তির বিশুদ্ধতা: আল্লাহর বাইরে কোনো শক্তির ওপর ভরসা স্থাপন করা অর্থহীন।
- জ্ঞান ও সচেতনতা: মানুষকে বোঝানো হয়েছে, সত্যিকারের জ্ঞানী ও সচেতন ব্যক্তি কখনো অক্ষম উপাস্যকে পূজা করবেন না।
ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই আয়াতের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে আল্লাহর প্রতি ভরসা স্থাপন এবং অন্যায় উপাস্য থেকে বিরত রাখা। মূর্তিপূজা, পাথর বা মনগড়া দেবতার প্রতি ভরসা রাখা কেবল মানুষের দুর্বলতার প্রমাণ। এই আয়াত ও হাদীস মানব সমাজে বিশ্বাস ও ঈমানের গুরুত্বকে বোঝাতে সহায়ক।
সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা
বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ বিভিন্ন বাহ্যিক বস্তু, মানুষ বা প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত ভরসা রাখে। আল্লাহর এই আয়াত তাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত শক্তি একমাত্র আল্লাহর। যেসব বিষয় মানুষকে প্রলুব্ধ করে বা ভরসার অধিকার বলে মনে হয়, সেগুলোও তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করে।
সূরা আল-হজ্জের ৭৩ নম্বর আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট হাদীস আমাদের শেখায় যে, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে মানুষ ডাকেন, তারা কোনো সৃষ্টিতে সক্ষম নয়। তারা নিজেও দুর্বল, এবং যাদের উপাস্য মনে করা হয়, তাদের ওপর ভরসা স্থাপনও অর্থহীন। মানুষের উচিত একমাত্র আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভক্তি স্থাপন করা।
এই শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা এবং মূর্তি পূজা থেকে দূরে থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ১৫৭৫,Signalbd.com



