
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় ২৬ জুলাই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তা প্রকাশ্যে এসেছে ২৮ জুলাই।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃঢ় নীতি গ্রহণ করায় শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।
অভিযোগের পেছনের ঘটনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া
সুব্রত কুমার বিশ্বাস, যিনি পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার বাসিন্দা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রীয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক এবং ছাত্রী একে অপরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। সুব্রত কুমার বিশ্বাস বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, কিন্তু পরে বিয়ে না করার কথা জানালে ছাত্রী এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর শিক্ষকের বিরুদ্ধে সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে। যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর তদন্ত করে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর, তদন্ত কমিটি স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ ও প্রশাসনের বক্তব্য
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আবদুল আওয়াল জানান, “রিজেন্ট বোর্ড সভায় শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। এটি শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার মান রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলও এ ধরনের ঘটনা বন্ধে সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জোরদার করবে।
যৌন হয়রানি: শিক্ষাঙ্গনের এক মারাত্মক সমস্যা
যৌন হয়রানি এখন শিক্ষাঙ্গনে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এমন অবৈধ ও অনৈতিক আচরণ শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এটি শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও পরিবেশকে দূষিত করে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ শিক্ষাঙ্গনকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেও কাজ করে।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন ও নীতি
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য আইন ও নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এই আইনগুলি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্থায়ী বহিষ্কার সিদ্ধান্ত এই আইনগুলোর সফল বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাবাতাবরণ তৈরির গুরুত্ব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও সম্মানজনক শিক্ষাবাতাবরণ তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় এক দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। এতে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুপ্রাণিত করার সুযোগ থাকবে।
একঝলক: ঘটনার সারাংশ
- অভিযোগ: সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
- সময়কাল: ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জমা।
- তদন্ত: বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল উচ্চতর তদন্ত করে।
- ফলাফল: অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ।
- সিদ্ধান্ত: ২৬ জুলাই ২০২৫, ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় স্থায়ী বহিষ্কার অনুমোদন।
- উপাচার্যের মন্তব্য: সিদ্ধান্ত আইন অনুযায়ী গ্রহণ হয়েছে এবং এটি শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি রোধে করণীয়
- সতর্কতা: শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি।
- তদন্ত: অভিযোগ উঠলে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত।
- শিক্ষা: শিক্ষকদের মধ্যে নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের প্রশিক্ষণ।
- নীতি: যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর নীতি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
- সচেতনতা: শিক্ষার্থীদের সচেতন করা ও অভিযোগের পদ্ধতি সহজতর করা।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাবাতাবরণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে উদাহরণ হিসেবে প্রভাবিত করবে। শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যায়, দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
MAH – 12008, Signalbd.com