শিক্ষা সংস্কার না করে কেন এসএসসির রেজাল্ট সংস্কার হলো? – প্রশ্ন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার না করে কেবল ফলাফল প্রকাশের নিয়মে পরিবর্তন এনে তাদের বিপাকে ফেলা হয়েছে। তারা সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা ও কলেজে ভর্তির সুযোগ দাবি করে আন্দোলনে নেমেছে।
এসএসসি ফেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: ঢাকা বোর্ডের সামনে উত্তাল বকশিবাজার
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রায় সাড়ে ছয় লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বড় একটি অংশ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
তাদের মূল দাবি— শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার ছাড়াই ফলাফল প্রকাশের নিয়ম বদলে ফেলার কারণে বহু শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উত্থাপন করে জানায়, সুষ্ঠু ও সমন্বিত সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পুনরায় মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে এবং অন্তত একটি বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা সংস্কার না করে ফলাফল সংস্কার: শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মতে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা কাঠামো, প্রশ্নপত্রের মান, বোর্ডভেদে প্রশ্নের জটিলতা ও মূল্যায়নের অসামঞ্জস্যতা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। কিন্তু এসব মৌলিক ইস্যুতে সংস্কার না এনে হঠাৎ করে ফলাফলের নিয়মে পরিবর্তন এনে খাতা মূল্যায়নের পদ্ধতি কঠোর করায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
তারা অভিযোগ করে, এমসিকিউ ও সিকিউ অংশে আলাদা পাসের নিয়ম ‘অমানবিক’ এবং এই নিয়ম কার্যকর হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে অবগত করা হয়নি।
চার দফা দাবি তুলে ধরলেন শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে চারটি প্রধান দাবি উপস্থাপন করা হয়—
- বোর্ডভেদে প্রশ্নপত্রের মান ও জটিলতার বৈষম্য দূর করতে হবে।
- অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
- এমসিকিউ ও সিকিউ মিলিয়ে মোট নম্বরের ভিত্তিতে পাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
- অন্তত একটি বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ফলাফলের অনিয়ম বা অন্যায় মূল্যায়নের কারণে যেন কেউ এক বছরের জন্য শিক্ষাজীবন থেকে ছিটকে না পড়ে।
অতীতের তুলনায় ফলাফলে বড় ধস: পরিসংখ্যান যা বলছে
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত ১০ জুলাই।
এতে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭১৬ জন ছাত্র এবং ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ জন ছাত্রী।
এ সংখ্যাটি গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফেল করা শিক্ষার্থীর রেকর্ড গড়েছে, যা অভিভাবক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মাঝেই উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষা বোর্ডের প্রতিক্রিয়া
এই আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন,
“শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক তা পর্যালোচনার বিষয়। তারপরও আমরা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরবো।”
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ১৩ জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় বোর্ডের পক্ষ থেকে ১৭ তারিখের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলা হলেও তারা কোনো বার্তা পাননি।
ফলে আবারও তারা রাজপথে নেমেছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা চাই: শিক্ষার্থীদের মানবিক আবেদন
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, দ্রুত সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা আয়োজন করা হলে তারা উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষাজীবনে ফিরে আসতে পারবেন।
বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয়ে ফেল করেছে, তাদের জন্য আগামী এক-দু’মাসের মধ্যেই সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা গেলে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা সম্ভব হবে।
তারা আরও জানান, রচনামূলক অংশে ভালো নম্বর পাওয়ার পরও শুধুমাত্র এমসিকিউ অংশে ১–২ নম্বর কম থাকায় ফেল করা হয়েছে — যা অযৌক্তিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে হতাশাজনক।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার জরুরি: বিশ্লেষক মত
শিক্ষাবিদদের মতে, শুধু পরীক্ষার কাঠামো নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ছিল।
মূল্যায়ন পদ্ধতি, বোর্ডভেদে প্রশ্নপত্রের মান, নম্বর বিভাজন এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির গাইডলাইন সবকিছুতেই দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন প্রয়োজন।
এমন আচমকা নিয়ম পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের জীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে বলেও মত দেন বিশ্লেষকরা।
সারসংক্ষেপ
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও আন্দোলন শুধু পরীক্ষার ফলাফল নয়, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার প্রতিফলন।
শিক্ষার্থীরা এখন প্রশ্ন তুলেছে— শিক্ষা সংস্কার ছাড়া কেন রেজাল্ট সংস্কার?
তাদের দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক এবং সরকার এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেবে — সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো উদ্যোগ না নিলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনোবল ও শিক্ষাগ্রহণে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।
এম আর এম – ০৩৯৮, Signalbd.com