যবিপ্রবিতে ৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাজেট। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে ৯২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেট ঘোষণা ও সভার বিস্তারিত
বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাজেট ঘোষণার তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে রিজেন্ট বোর্ডের ১০৭তম বিশেষ সভায় এই বাজেট উত্থাপন করা হয়। সভায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন। পরে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যরা বাজেট নিয়ে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেটটি অনুমোদিত হয়।
এছাড়া একই সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৮৯ কোটি ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন পায়।
বাজেটে গবেষণায় বিশেষ জোর
অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকেই বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।” তিনি জানান, গবেষণাখাতে এবারের বাজেটে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ বাড়ানো, গবেষণাকাজে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে এই খাতে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। সরকারকে গবেষণার বাজেট আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান কোষাধ্যক্ষ।
বাজেটের প্রবৃদ্ধি ও প্রসার
কোষাধ্যক্ষ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাজেট ছিল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে এই বাজেট ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়—যা গত ১৮ বছরে প্রায় ৮০ গুণ বৃদ্ধি।
উপাচার্যের বক্তব্য
বাজেট অনুমোদনের পর যবিপ্রবির উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম ও কাজের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। এর প্রতিফলন বাজেটেও লক্ষ্য করা যায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কাজগুলো সফলভাবে সম্পন্নের পথে রয়েছে। আমরা স্বচ্ছতা বজায় রেখে আগামী দিনেও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাবো।” তিনি বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট হিসাব দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সভায় অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ
রিজেন্ট বোর্ডের এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপাচার্যের সভাপতিত্বে অংশগ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, বিসিএসআইআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হোসেন সোহরাব, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আলতাফ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সায়েন্স রিসার্চ সেন্টারের কাউন্সিল সদস্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন।
এছাড়া সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সরকার, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ আসমা বেগম, যবিপ্রবির পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম জাকির হোসেন, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক, কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোসা. আফরোজা খাতুন, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল কাদের, যশোর সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম আহসান হাবীব, রিজেন্ট বোর্ডের সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব এবং পরিচালক (হিসাব) মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।
বাজেটের মূল খাতসমূহ
এ বছরের বাজেটে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের বরাদ্দ নিম্নরূপ:
- গবেষণা খাত: ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ (বিশদ উল্লেখ না থাকলেও বোঝা যায় এ খাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে)
- ছাত্র কল্যাণ ও সহায়তা: বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আয় থেকে এই খাতে অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা
- ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন: বরাদ্দ উল্লেখ না থাকলেও গত বছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ
যবিপ্রবির চলমান অগ্রযাত্রার প্রেক্ষাপটে এই বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। গবেষণা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা—এই চারটি স্তম্ভকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে এবারের বাজেট। শিক্ষা খাতে এমন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাপূর্ণ বাজেট প্রণয়ন ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে তাদের স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা এবং ভবিষ্যৎমুখী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। আগামী দিনে বাজেটের কার্যকর বাস্তবায়নই হবে মূল চ্যালেঞ্জ, যেখানে গবেষণাখাতের অগ্রাধিকার আরও দৃশ্যমান হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।