ফুটবল

মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেকে হারিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে পিএসজি

মেসি, নেইমার এবং এমবাপ্পে—বিশ্ব ফুটবলের তিন মহাতারকা—যখন পিএসজিতে খেলেছেন, তখনও ক্লাবটি চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয়। অথচ তারা ক্লাব ছাড়ার পর বড় কোনো তারকা ছাড়াই পিএসজি এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে। কীভাবে সম্ভব হলো এই পরিবর্তন?

তারকাবিহীন পথচলায় পিএসজির উত্থান

২০২১–২২ এবং ২০২২–২৩ মৌসুমে লিওনেল মেসি, নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে তৈরি ‘গ্যালাকটিকো’ পিএসজি ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে নাম লিখিয়েছিল। কিন্তু দুই মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের।

এরপর ২০২৩ সালে মেসি ও নেইমার এবং ২০২৪ সালে এমবাপ্পে ক্লাব ছেড়ে যান। মনে করা হচ্ছিল, পিএসজি হয়তো ছন্দ হারাবে। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টোটা। তারা তারকাবিহীন একটা নতুন ছকে গড়া দলে পরিণত হলো—যারা এখন ইউরোপসেরা হওয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।

বাজিমাত লুইস এনরিকের পরিকল্পনায়

২০২৩ সালে দায়িত্ব নেওয়া কোচ লুইস এনরিক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন—তিনি বড় তারকাদের নির্ভরশীলতা চান না। দলের প্রত্যেক সদস্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে, সবার কাছ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা আদায় করাই তার দর্শন।

বার্সেলোনায় মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এনরিক জানতেন, শুধু তারকাই নয়, দরকার ভারসাম্যপূর্ণ দল। তাই তিনি পিএসজিকে রূপান্তরিত করেছেন একটি পরিশ্রমী ও গতিময় দলে, যেখানে সবাই আক্রমণেও যায়, আবার রক্ষণেও দায়িত্ব পালন করে।

কৌশলগত পরিবর্তনই বড় চাবিকাঠি

পিএসজি এবার দলের গতি ও ফিটনেসে নজির গড়েছে।

মৌসুমে গড়ে দৌড়: প্রতি ম্যাচে গড়ে ১১৭.৯৪ কিমি দৌড়েছে দলটি, যা গত মৌসুমের তুলনায় ১০ কিমি বেশি।
চ্যান্স তৈরি ও প্রেসিং: ড্রিবল, চ্যান্স তৈরি, বল প্রেসিং—সবকিছুতেই শীর্ষে পিএসজি।
অভিনব পজিশনিং: ডান উইংয়ের দেম্বেলেকে সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলানো, আশরাফ হাকিমিকে মিডফিল্ডমুখী করার মত কৌশলিক পরিবর্তন এনে আক্রমণে গতি ও বিস্ময় দুটোই এনেছেন এনরিক।

তরুণদের উপর আস্থা, বড় তারকার ওপর নয়

সুপারস্টার-নির্ভরতা ত্যাগ করে পিএসজি এবার তরুণ প্রতিভাদের উপর জোর দিয়েছে।

রান্দাল কোলো-মুয়ানিউগার্তে– দুই প্রতিভাকে কিনেছে যথাক্রমে ৭.৫ কোটি ও ৬ কোটি ইউরোতে।
খিচা কাভারাস্কেইয়ার– নাপোলি থেকে আসা জর্জিয়ান উইঙ্গার ২ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করে আলো ছড়িয়েছেন।

দলের প্রত্যেকেই মাঠে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছেন, দল হয়ে খেলছেন—যা আগে পিএসজির বড় তারকাদের দলে দেখা যেত না।

চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘আন্ডারডগ’ থেকে ফাইনাল অবধি

২০২৪–২৫ চ্যাম্পিয়নস লিগের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। গ্রুপ পর্বে ৮ ম্যাচে ৪টিতে হার, ৩৬ দলের মধ্যে ১৫তম অবস্থান। প্লে-অফ খেলতে হয়। কিন্তু এরপর থেকেই বদলে যায় দৃশ্যপট।

ম্যানসিটি ম্যাচ: ২২ জানুয়ারি, ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ৪-২ এ জয়।
স্টুটগার্ট ম্যাচ: দেম্বেলের হ্যাটট্রিকে ৪-১ জয়।
নকআউট পর্ব: প্লে-অফে ব্রেস্ত, শেষ ষোলোয় টাইব্রেকারে লিভারপুল, কোয়ার্টারে অ্যাস্টন ভিলা এবং সেমিতে আর্সেনালকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় পিএসজি।

এমন উত্তরণের পর লিভারপুলের ভির্জিল ফন ডাইক পর্যন্ত বলেছিলেন, “গত তিন বছরে যাদের বিপক্ষে খেলেছি, এই পিএসজিই সেরা দল।”

পুরোনো অভিশাপ কাটানোর সুযোগ

২০১9–২০ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল পিএসজির। এবার পাঁচ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে তারা। প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান।

জিতুক বা হারুক, এবারকার এই পিএসজি প্রমাণ করেছে—বড় নাম নয়, দলের সমন্বয়ই আসল শক্তি।

মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে থাকাকালে পিএসজি একঝাঁক তারকার ঝলকে আলো ছড়ালেও দল হিসেবে কখনোই শক্তিশালী ছিল না। তাদের প্রস্থানের পরই লুইস এনরিকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক ‘রিয়েল টিম’, যারা সব বাধা পেরিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের চূড়ায় পৌঁছেছে।

এটাই প্রমাণ করে—ফুটবলে নাম নয়, কাজই আসল

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button