
ইসলাম এতিমদের গুরুত্ব দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। একজন এতিমকে স্নেহ-মমতায় বড় করে তোলা কেবল মানবিক কাজই নয়, বরং এটি জান্নাত পাওয়ার অন্যতম সহজ ও মর্যাদাপূর্ণ মাধ্যম। সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি এতিম শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীল হয়, তবে একটি মানবিক সমাজ গঠন করা সম্ভব।
এতিম সন্তানের প্রতি ইসলাম কী বলেছে?
ইসলামে এতিমদের প্রতি দয়া, সহানুভূতি ও আদর-স্নেহ দেখানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইসলাম শুধুমাত্র নৈতিক নির্দেশনাই দেয়নি, বরং এতিমদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইনগত নির্দেশনাও দিয়েছে।
‘এতিম’ শব্দটি আরবি। যার অর্থ— নিঃস্ব, অসহায়, ও নিঃসঙ্গ। ইসলামি পরিভাষায়, যার পিতা ইন্তেকাল করেছেন সেই শিশুকে এতিম বলা হয়। কারণ একজন শিশুর প্রধান অবলম্বন তার বাবা, যার কাঁধে দায়িত্ব থাকে ভরণপোষণ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার।
এতিমের প্রতি নবীজির ভালোবাসা
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের বড় একটি অংশ এতিম জীবনের অভিজ্ঞতায় ভরপুর। তিনি নিজেও ছিলেন এতিম। তাই নবী করিম (সা.) নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এতিমদের প্রতি যে ভালোবাসা ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়েছেন, তা ইসলামি সমাজব্যবস্থার একটি মৌলিক ভিত্তি হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেছেন,
“আমি এবং এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এই দুই আঙুলের মতো পাশাপাশি থাকব।”
(বুখারি: ৫৩০৪)
এমন উচ্চতর প্রতিশ্রুতি খুব কম আমলের ক্ষেত্রেই এসেছে। অর্থাৎ, কেউ যদি একটি এতিম শিশুর দায়িত্ব নেয়, তাকে স্নেহ-ভালোবাসায় বড় করে তোলে, তবে তার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সংস্পর্শে জান্নাতে থাকার সম্মান রয়েছে।
কোরআনের নির্দেশনা
পবিত্র কোরআনে বহুবার এতিমদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এতিমদের প্রতি সদয় ও ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুরা বাকারায় বলা হয়েছে:
“তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলে দাও, তাদের উন্নয়নের জন্য ভালো ব্যবস্থাই উত্তম।” (বাকারা: ২২০)
আরও বলা হয়েছে:
“তুমি এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না।” (সুরা দুহা: ৯)
এসব আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, এতিম শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা, অবহেলা বা উপেক্ষা করা ইসলামে চরমভাবে নিষিদ্ধ।
এতিমদের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ
কোনো এতিম শিশুর যদি কোনো সম্পদ থেকে থাকে, তবে তা তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে সংরক্ষণ করতে হবে।
আল্লাহ বলেন:
“যারা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পদ ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ভরে এবং শিগগিরই জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।” (সুরা নিসা: ১০)
সুতরাং, এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা কিংবা অপচয় করা শুধু অন্যায় নয়, বরং একে জাহান্নামের কারণ বলা হয়েছে।
বিধবা ও এতিমের পাশে দাঁড়ানো
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,
“বিধবা ও গরিবদের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদের মতো।” (মুসলিম: ৫২৯৫)
এ বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায়, যারা এতিমদের ভরণপোষণ করে, তাদের মর্যাদা সেই ব্যক্তির সমান, যে রাত্রি জেগে ইবাদত করে এবং রোজা রাখে।
সমাজে এতিমদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
বর্তমানে সমাজে অনেকেই এতিমদের প্রতি অবহেলা করে থাকেন। কেউ কেউ তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সুযোগ পেলেই তাদের অধিকার নষ্ট করে। অথচ ইসলাম সেই আদর্শ ধর্ম যেখানে এতিমদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিই মূল ভিত্তি।
আমরা যদি সমাজের এই শ্রেণির মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, তবে শুধুমাত্র দুনিয়াতেই নয় বরং আখিরাতে চূড়ান্ত পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হব।
জান্নাতের সান্নিধ্যে থাকার বিশেষ সুযোগ
আমরা অনেকেই জান্নাতে প্রবেশের দোয়া করি, ইবাদতে মগ্ন হই। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এক সহজ এবং মানবিক উপায় শিখিয়েছেন — এতিম সন্তানের লালন-পালন।
এটি এমন একটি কাজ, যা আমাদের মানবিকতা জাগ্রত করে, সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ঘটায় এবং একইসঙ্গে জান্নাতের সান্নিধ্যে থাকার বিশেষ সুযোগ এনে দেয়।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, আমরা ব্যক্তিগতভাবে এতিমদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কী করছি? আমাদের আশপাশেই হয়তো এমন কেউ আছে, যার মুখে হাসি ফোটানোই হতে পারে আমাদের জান্নাতের টিকিট।
এম আর এম – ০৩৮৮, Signalbd.com