বাংলাদেশ

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা কিছুদিনের মধ্যেই: আইন উপদেষ্টা

Advertisement

সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।


জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। অবশেষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, এবার ভোটাররা অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।

ঘটনা ও ঘোষণার বিস্তারিত

সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা খুব শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করব। ভোট যেন সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত হয়, সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার।”
তিনি আরও বলেন, পূর্ববর্তী কিছু নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা তাদের ভোট দিতে না পারার অভিযোগ করেছেন। এবার পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার পরিকল্পনা

ড. আসিফ নজরুল জানান, নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। এ বিষয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিয়ত জোর দিচ্ছেন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অতীত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

সংবাদ সম্মেলনে অতীতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “গত কয়েকটি নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারেননি, কিন্তু এবারের নির্বাচন নিয়ে আমরা অনেক বেশি সতর্ক। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, এবার যেন সে রকম পরিস্থিতি না হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়েও অনুসন্ধান করলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।”

মামলার বোঝা হ্রাসের পদক্ষেপ

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ১৫,০০০-এর বেশি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া সাইবার আইনের অধীনে দায়ের করা ৪০৮টি এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত ৭৫২টি মামলাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও সাধারণ নাগরিক হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার

গত এক বছরে আইনি সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মন্ত্রীপর্যায়ে নিষ্পত্তিকৃত নথির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,২৮৩টি, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দপ্তরে ৩৯১টি বিষয়ে আইনি মতামত দিয়েছে এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৪টি ডকুমেন্ট সত্যায়ন করেছে।
এছাড়া সংস্কার কমিশন, গুম তদন্ত কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সচিবালয়ের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক ৪ হাজার ৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা ও ২৭৪ জন অ্যাটর্নি নিয়োগ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগেও সহযোগিতা করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

সরকারের প্রতিশ্রুতি

সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এসব পদক্ষেপের ফলে বিচার ব্যবস্থা আরও দ্রুত, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়েছে। জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ আগের তুলনায় সহজ হয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের অভিপ্রায় স্পষ্ট। আমরা চাই জনগণ যেন ভোট দিয়ে একটি নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি চলছে।”

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

এখন সব চোখ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দিকে। রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ জনগণও এই ঘোষণার অপেক্ষায়। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে আইন উপদেষ্টা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।

শেষ কথা
আইন উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ প্রকাশ করা হবে। এখন দেশের রাজনীতি, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণ আগ্রহভরে সেই দিনের অপেক্ষায়। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা জানাবে আগামীর সময়।

এম আর এম – ০৬৩২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button