দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের দুই প্রতিবেশী দেশ আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের অবসানে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৮ আগস্ট শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশের নেতারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে টানা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও মিত্রতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংঘাত ও চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশনিয়ান এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ উভয়েই এই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটিকে ‘দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের জন্য এক নতুন সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান একসঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের এবং পরস্পরের সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও ভ্রমণ সম্পর্ক স্থাপনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।”
চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন রুট উন্মুক্ত করা হবে যা ককেশাস অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বাড়াবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবও বৃদ্ধি পাবে।
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাত
দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের নাগোরনো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সংঘাত ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে শুরু হয়। এই অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত হলেও জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ১৯৯৪ সালে আর্মেনিয়া সমর্থিত বাহিনীর দখলে যাওয়া নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়েই দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ২০২০ সালে নাগোরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় আজারবাইজানের হাতে চলে আসার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। চলতি বছর এই শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
চুক্তির প্রভাব এবং ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা
এই শান্তিচুক্তির ফলে ককেশাস অঞ্চলের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমে যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাণিজ্যিক ও ভ্রমণ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।
তবে, ইতিহাস ও পূর্বের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে অনেকেই এই চুক্তি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তির সফলতা নির্ভর করবে দুই দেশের রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার ওপর।
বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই চুক্তিকে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “এই শান্তিচুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, পুরো ককেশাস অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতে আরও বড় একটি স্থিতিশীলতার পথ প্রশস্ত করতে পারে।”
আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই ধরনের শান্তি চুক্তি ককেশাসের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন দিক নির্দেশ করবে। তবে, দীর্ঘদিন ধরে চলা শত্রুতার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনে সময় লাগবে।
সংক্ষিপ্ত
৮ আগস্টের ঐতিহাসিক এই শান্তিচুক্তি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যুদ্ধবিরতি, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে নতুন পরিবহন করিডোর খোলার মাধ্যমে ককেশাস অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বাড়বে।
তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আগামী কয়েক মাস ও বছর কীভাবে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে, তার ওপর নির্ভর করবে শান্তি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা। উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থাভঙ্গ বা নতুন কোনো সংঘর্ষ হলে এই শান্তির পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এম আর এম – ০৭৬৭, Signalbd.com



