বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৬৬ জন

Advertisement

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ফের জটিল আকার ধারণ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন রোগী। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪৬৬ জন নতুন রোগী। যদিও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী, তবুও আক্রান্তের বাড়তি প্রবণতা জনমনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে।

নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৬৬ জনের মধ্যে সর্বাধিক রোগী রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে। একই সময়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, ফলে চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১০৫ জনে।

বিভাগভিত্তিক পরিস্থিতি

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নতুন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭৪ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৭ জন। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬০ জন। এ ছাড়া বরিশালে ৮৩ জন, চট্টগ্রামে ৬০ জন, খুলনায় ৪৭ জন, রাজশাহীতে ৬৬ জন, ময়মনসিংহে ৪ জন, রংপুরে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা রোগীর সংখ্যা

গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৫ হাজার ১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে এখনও ঝুঁকিপূর্ণ করে রেখেছে।

চলতি বছরের পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৬ হাজার ২৭৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের হার ৫৯ শতাংশ এবং নারীর হার ৪১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও নগর এলাকায় পানিবদ্ধতার কারণে এ বছরও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তাদের মতে, রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা ও রক্তক্ষরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।”

স্থানীয় প্রশাসনের করণীয়

স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনগুলো ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে। নালা-নর্দমা পরিষ্কার, মশক নিধন এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্কুল-কলেজে বিশেষ প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণ মানুষের সতর্কতা ও দায়িত্ব

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রতিটি পরিবারকে নিজেদের বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। টব, কৌটা, টায়ার কিংবা ছাদে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের বিশেষভাবে সুরক্ষিত রাখতে মশারি ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।

সংক্ষিপ্তসার

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৬ জন রোগী, মারা গেছেন আরও একজন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬ হাজার।

ডেঙ্গু এখন আর শুধু মৌসুমি রোগ নয়, বরং এটি সারা বছরব্যাপী একটি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান পরিস্থিতির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণই পারে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। এখন প্রশ্ন একটাই—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা কতটা দ্রুত এই সংকট সামাল দিতে পারব?

এম আর এম – ০৮৯৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button