কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা। সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে ভারত নিজেই ফেলেছে জটিল এক কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে। বিশ্বরাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ চাপের মাঝে এখন দিশেহারা মোদী সরকার।
ভারতের ঘোষণা: পানিচুক্তি আর নয়!
সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানান, ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি আর কখনও পুনর্বহাল হবে না। তিনি বলেন, “এখন পাকিস্তানে যাওয়া পানি আমরা নিজেদের খালে রূপান্তর করে রাজস্থানে পাঠাব। পাকিস্তান এতদিন অন্যায়ভাবে যে পানি পেত, এবার সেই সুবিধা বন্ধ হবে।”
এই ঘোষণার মাধ্যমে ভারত যেন পানিপথে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা নয়।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি?
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‘ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি’ বা সিন্ধু পানিচুক্তি। এর মাধ্যমে সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানিবণ্টনের একটি কাঠামো তৈরি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বের তিনটি নদী ভারতের জন্য এবং পশ্চিমের তিনটি নদী পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
এই চুক্তি শুধু একটি পানিবণ্টনের বিষয় নয় — এটি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক, কৃষি অর্থনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: যুদ্ধের হুঁশিয়ারি
পাকিস্তান একে স্পষ্টভাবে “যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য” বলে উল্লেখ করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান পরপর একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নদীর প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা মানেই সরাসরি আগ্রাসন।
এমনকি পাকিস্তানি গণমাধ্যমেও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
বাস্তবতা: পানি বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব ভারতের পক্ষে?
ভারতের বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি পুরোপুরি বন্ধ করা অত্যন্ত কঠিন। প্রকৌশলগত সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক আইন এর বড় বাধা।
তাছাড়া, যদি ভারত সত্যিই পানি প্রবাহে হস্তক্ষেপ করে, তবে সেই পরিবর্তন পাকিস্তানের কৃষি, জনজীবন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে — যার দায়ভার আন্তর্জাতিক মহল ভারতকেই দেবে।
অভ্যন্তরীণ চাপ: মোদির কাঁধে রাজনৈতিক বোঝা
মোদী সরকার ইতোমধ্যেই অপারেশন সিঁদুর ও সীমান্ত ইস্যুতে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে। যদি পানিচুক্তি পুনর্বহাল করতে হয়, তাহলে বিরোধীরা এটিকে দুর্বলতা হিসেবে তুলে ধরবে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছে এটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ, কেউ বলছে এটি পরিণতির কথা না ভেবে নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত।
“কাশ্মীর ইস্যুর মতোই পানি এখন পরিণত হয়েছে অস্ত্রের মতো কৌশলগত এক হাতিয়ার”—মাজেদ আখতার, ভূগোলবিদ, কিংস কলেজ, লন্ডন।
ঘটনার সারাংশ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত যখন সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে পাকিস্তানকে পানি সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দেয়, তখন বিষয়টি শুধু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি—তা পরিণত হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে। এই মুহূর্তে নিজেই নিজের পাতা ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে ভারত।
সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে ভারতের এই সিদ্ধান্ত এখন আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। সামনে বিশ্বব্যাংক বা জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করতে পারে — এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রশ্ন হলো, কূটনৈতিক সম্পর্কের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি ভারত কতদূর নিতে চায়?
পরিস্থিতি কি আরেকটি সীমান্ত সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে? নাকি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ভারত আবারও চুক্তিতে ফিরবে?
এম আর এম – ০২৯৬, Signalbd.com



