টেসলার শেয়ারে ধাক্কা, ১৯.২ শতাংশ কমেছে ইলন মাস্কের সম্পত্তি

ব্লুমবার্গ ইন্ডেক্সের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার টেসলার স্টকে বড় ধাক্কা খায়। যা সরাসরি মাস্কের সম্পদের উপরেও প্রভাব ফেলেছে। নভেম্বরের পর প্রথমবারের জন্য এই কোম্পানির বাজারগত মূলধনের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের থ্রেশহোল্ডের নীচে রয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় আঘাত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বৈদ্যুতিক গাড়ির বিভাগে এই কোম্পানির উপরে বাজি ধরেছিলেন বহু বিনিয়োগকারী। জানা গেছে, টেসলার শেয়ারের দাম ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৭ শতাংশ নিম্নগামী। মঙ্গলবার স্টকের দাম ৮ শতাংশ কমে হয় ৩০৫ মার্কিন ডলার। তবে এখনও তিনি মোট সম্পদের অর্থে সবার ওপরে।
ইউরোপিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে ইলেকট্রিক গাড়ির বিক্রির পরিমাণ ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে জানুয়ারিতে টেসলার বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৪৫ শতাংশ নিম্নগামী হয়েছে। বিক্রির পরিমাণ হ্রাস পাওয়া টেসলার জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে। মূলত বিশ্বজুড়ে চাহিদা হ্রাস এবং চীনের ইভি নির্মাতাদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা কোম্পানিটিকে চাপে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের মার্কিন রাজনীতির সঙ্গে গভীর যোগ টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। সংস্থার কর্ণধারের রাজনৈতিক যোগ টেসলার মূল ব্যবসাকে চাপের মুখে ফেলছে। ব্র্যান্ডেরও ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে।বিশ
্বখ্যাত ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারদরে বড় ধাক্কা লেগেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টেসলার শেয়ারের দাম প্রায় ২৭ শতাংশ নিম্নমুখী হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগজনক। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ারস ইন্ডেক্স জানিয়েছে, ইলন মাস্কের সম্পদ ১৯.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা প্রায় ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
টেসলার বাজারমূল্যে বিশাল পতন
মঙ্গলবার টেসলার শেয়ারের মূল্য ৮ শতাংশ কমে ৩০৫ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। এটি নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো কোম্পানির বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নিয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদের উপর প্রভাব ফেলেনি, বরং বিনিয়োগকারীদের জন্যও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
ইউরোপের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, টেসলার বিক্রি ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই প্রবণতা ইলন মাস্কের কোম্পানির জন্য উদ্বেগজনক এবং কোম্পানিটির সামগ্রিক ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বব্যাপী ইভি বাজারে চাহিদার হ্রাস এবং চীনা ইভি নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ফলে টেসলার অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক সংযোগ কি টেসলার শেয়ারের পতনের কারণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলন মাস্কের মার্কিন রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক একাধিকবার মার্কিন রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রকাশ্যে মতামত দিয়েছেন, যা কোম্পানির ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন, মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা টেসলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এটি ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতার উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলন মাস্ক যখন স্পেসএক্স এবং নিউরালিংকের মতো অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সময় ব্যয় করছেন, তখন টেসলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে তাঁর মনোযোগ কিছুটা কমে যাচ্ছে। এতে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, ভবিষ্যতে টেসলার শেয়ারদরে আরও বড় ধস নেমে আসতে পারে।
টেসলার বিক্রির সংকট ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
টেসলার জন্য বিক্রির হার কমে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা, চীনের ইভি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বাজার দখল এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে টেসলার বিক্রি কমেছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোম্পানিটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
ইউরোপিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইলেকট্রিক গাড়ির বিক্রির পরিমাণ ইউরোপে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, টেসলার বিক্রি ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে বোঝা যায়, অন্যান্য ব্র্যান্ডের গাড়ির চাহিদা বাড়লেও টেসলা পিছিয়ে পড়ছে। চীনের ইভি ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় টেসলা তাদের গাড়ির দাম কমাতে পারছে না, যা বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও টেসলার পরিকল্পনা
টেসলার শেয়ারদরের এই পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীরা চাইছেন, কোম্পানি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক এবং বাজারে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করুক। কোম্পানির পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কোনো স্পষ্ট বার্তা না আসায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমেছে।
ইলন মাস্ক অবশ্য বলেছেন যে, টেসলা শিগগিরই নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও মডেল বাজারে আনবে, যা কোম্পানির বিক্রির হার পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু নতুন প্রযুক্তি আনাই যথেষ্ট নয়, বরং বাজার কৌশল ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
উপসংহার
টেসলার সাম্প্রতিক শেয়ারদরের পতন এবং ইলন মাস্কের সম্পদ হ্রাসের ঘটনা কোম্পানির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, চীনা নির্মাতাদের আধিপত্য, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কোম্পানির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, টেসলা যদি তার বিক্রির হার পুনরুদ্ধার করতে চায়, তবে তাকে মূল্য কৌশল, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাজার কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায়, কোম্পানিটি ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।