অর্থনীতি

সায়মা ওয়াজেদের সূচনা ফাউন্ডেশনের কর–সুবিধা বাতিল

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের আয়কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করেছে। এ ছাড়া সূচনা ফাউন্ডেশনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দান এত দিন করমুক্ত ছিল। সেই সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে।

আজ সোমবার এনবিআর এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল) সূচনা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল এবং ২০২৩ সালের ১৯ জুন পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনকে এই কর–সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। দুটি প্রজ্ঞাপনই আজ বাতিল করেছে এনবিআর।

সূচনা ফাউন্ডেশনের কর–সুবিধা বাতিলের কারণ

সূচনা ফাউন্ডেশনের কর-সুবিধা বাতিলের পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বর্তমানে ফাউন্ডেশনের আর্থিক লেনদেন এবং অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত ২৪ নভেম্বর সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত (জব্দ) করার নির্দেশ দেয়।

সরকারি নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কর-সুবিধা অব্যাহত রাখলে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং চলমান তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

কর-সুবিধার আওতায় কী ছিল?

সূচনা ফাউন্ডেশনকে দেওয়া কর-সুবিধার আওতায় ছিল:

  1. ফাউন্ডেশনের আয়ের ওপর কর অব্যাহতি
  2. ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেওয়া দান করমুক্ত
  3. দানের অর্থ কর রেয়াতযোগ্য হিসেবে গণ্য
  4. ফাউন্ডেশনের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয়ে বিশেষ ছাড়

এই সুবিধাগুলো বাতিল হওয়ায় এখন ফাউন্ডেশনের সম্পূর্ণ আয় করের আওতায় আসবে এবং যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি দান করে, সেটি করমুক্ত থাকবে না।

দুর্নীতির অভিযোগ ও তদন্ত

সূচনা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, ফাউন্ডেশনটির আর্থিক লেনদেন, দান সংগ্রহ ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকটি অনিয়মের বিষয়ে তথ্য প্রমাণও সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে কয়েকটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের হিসাবে বড় অঙ্কের অর্থ এসেছে, যার উৎস ও ব্যয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে এর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

সুবিধা বাতিলের পরিণতি

কর-সুবিধা বাতিল হওয়ায় সূচনা ফাউন্ডেশনের আর্থিক কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দাতাদের অনীহা দেখা দিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

সরকারের ব্যাখ্যা

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “এটি কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। যেকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর-সুবিধা নিয়ে যদি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তাহলে তা পুনর্বিবেচনা করাই স্বাভাবিক।”

অপরদিকে, সরকারপক্ষ বলছে, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অংশ।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সূচনা ফাউন্ডেশনের কর-সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে, বর্তমান সরকারপন্থী বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত।

উপসংহার

সূচনা ফাউন্ডেশনের কর-সুবিধা বাতিলের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব নীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। পাশাপাশি দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার প্রশ্নও নতুনভাবে উঠে এসেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button