পিএসসির নতুন সদস্য নিয়োগে সরকারের সতর্কতা
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নতুন সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এবার বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার। গত বছরের ডিসেম্বরে নিয়োগকৃত ছয় সদস্যকে নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিলের ঘটনায় সরকার বিব্রত হয়েছে। তাই এবারে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা। যাচাই করা হচ্ছে সদস্যের সুপারিশ পাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় ও দক্ষতা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ কারণে নতুন সদস্য নিয়োগে দেরি হচ্ছে।
পিএসসির কাজের চাপ
এদিকে, পিএসসির কাজের চাপ বাড়ছে। নতুন সদস্য নিয়োগ না হওয়ায় আগের অনেক কাজ ঝুলে আছে। নতুন সদস্য না থাকায় পিএসসি নতুন কাজ শুরু করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে, নতুন সদস্য নিয়োগ না হওয়ায় কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটির।
বর্তমানে পিএসসির চেয়ারম্যানসহ সদস্যসংখ্যা ৯ জন। আগে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ জন।
বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল
পিএসসির একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ নতুন নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এই সমালোচনা ওঠে। পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এই নিয়োগের আদেশ বাতিল করা হয়। বাতিল হওয়া সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক শাহনাজ সরকার, মো. মুনির হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ এফ জগলুল আহমেদ, মো. মিজানুর রহমান, শাব্বির আহমদ চৌধুরী ও অধ্যাপক সৈয়দা শাহিনা সোবহান।
পিএসসির নতুন সদস্য হিসেবে এই ছয় ব্যক্তিকে ২ জানুয়ারি নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। তাঁদের শপথ স্থগিত চেয়ে ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল পিএসসি। পিএসসির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ছয় সদস্যের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্ট।
সতর্কতার কারণ
সর্বশেষ নতুন নিয়োগ পাওয়া সদস্যদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হওয়ায় সরকার এবার নতুন সদস্য নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের কাছে সদস্য হওয়ার ব্যাপারে যাদের নাম আসছে, তা অনেক ভাবেই যাচাই করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আগের ছয়জনের কয়েকজনের নানা বিষয়ে সম্পৃক্ততা ছিল, তাই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এটি সরকারের জন্য বিব্রতকর।”
কাজের গতি কমে গেছে
পিএসসির কাজের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন সদস্যরা। এই সদস্যরা বিসিএসের প্রধান এবং ইউনিটপ্রধান হিসেবে কাজ করেন। বিসিএসের নিয়োগের বাইরে নন-ক্যাডারের নিয়োগ, প্রশ্ন করা, মডারেশন, পরীক্ষার সময় ঠিক করা, ফল দেওয়ার মতো নানা কাজে সদস্যরা জড়িত থাকেন। গত সরকারের আমলে অনেক দিন অচলাবস্থার পর কমিশন পদত্যাগ করে। পরে চেয়ারম্যানসহ নতুন আট সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার।
বর্তমানে এই সদস্যরা ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা নিচ্ছেন। ভাইভার কারণে সদস্যদের কাজের গতি কমে গেছে। নতুন সদস্য নিয়োগ হলে কাজের গতি বাড়বে বলে মনে করেন নতুন চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম। তিনি বলেন, “আশা করি সরকার আমাদের এখানে নতুন সদস্য নিয়োগের কাজ করবে। তাতে আমাদের কাজগুলো আরও ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।”
পিএসসির নতুন সদস্য নিয়োগে সরকারের সতর্কতা এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যে, ভবিষ্যতে বিতর্কিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে। নতুন সদস্য নিয়োগ হলে পিএসসির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হবে।