অর্থনীতি

দেশের রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৪৩ বিলিয়ন ডলার

Advertisement

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাম্প্রতিক সময়ে আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি। এই ইতিবাচক অগ্রগতি অর্থনীতিতে আস্থার বার্তা দিলেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিট রিজার্ভ এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণা

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১,৪৩২.০৮ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬,৪৫০.০৬ মিলিয়ন ডলারে।

এর আগে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১,৩৮৮.১২ মিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী নিট রিজার্ভ ছিল ২৬,৩৯৯.৯৩ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, মাত্র একদিনের ব্যবধানে রিজার্ভে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

পূর্বপটভূমি: রিজার্ভের ওঠানামা

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একসময় ৪৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল। তবে রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং রেমিট্যান্সের প্রবাহে ওঠানামার কারণে তা দ্রুত কমতে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি এবং আমদানি দায় মেটাতে কড়াকড়ি আরোপ। এর ফলে ধীরে ধীরে রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রভাব

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধি মানে হলো দেশের বৈদেশিক লেনদেনের সক্ষমতা কিছুটা বেড়েছে। এতে আমদানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি, খাদ্যশস্য ও ঔষধ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে রিজার্ভ একটি দেশের আর্থিক সক্ষমতার প্রতীক। রিজার্ভের সামান্য বৃদ্ধি হলেও তা বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং ও বৈদেশিক ঋণগ্রহণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

২০২১ সালে রিজার্ভ যখন সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, তখন দেশের অর্থনীতিকে ‘স্থিতিশীল’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে ৩১.৪৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আগের তুলনায় কম হলেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোর নিম্নগামী প্রবণতার পর এটি একটি স্বস্তিদায়ক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিট রিজার্ভ গণনার ক্ষেত্রে আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন প্রায় ২৬.৪ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ ধরে রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রিজার্ভের সামান্য বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও এটিকে স্থায়ী প্রবণতা করতে হলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”

অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি জানিয়েছে, রিজার্ভে সাময়িক উন্নতি হলেও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পরিশেষে

বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩১.৪৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া অর্থনীতির জন্য আশার বার্তা। তবে এই উন্নতি কতটা স্থায়ী হবে তা নির্ভর করছে রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর। অর্থনীতিবিদদের মতে, রিজার্ভ বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও কঠোর অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা জরুরি। এখন দেখার বিষয় হলো, সামনের মাসগুলোতে রিজার্ভ কি আরও শক্তিশালী অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় কি না।

এম আর এম – ১১৬২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button