বাংলাদেশ সরকার আধাসামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র জন্য ২,২৫৮টি নতুন পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছে। এই পদগুলো বিজিবির তিনটি ব্যাটালিয়ন এবং একটি হাসপাতালের জন্য সৃষ্টি করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি-তে জানানো হয়েছে, নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বিজিবির কার্যক্রম আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হবে।
নতুন পদ কোথায় এবং কতটুকু
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই তিনটি ব্যাটালিয়ন হলো:
- ভুরুঙ্গামারী ব্যাটালিয়ন, কুড়িগ্রাম
- থানচি ব্যাটালিয়ন, বান্দরবান
- মেহেরপুর ব্যাটালিয়ন, মেহেরপুর
এছাড়া, বিজিবির একটি হাসপাতালও এই পদসমূহের আওতায় থাকবে, যা অবস্থিত গুইমারা, খাগড়াছড়ি-তে।
প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নের জন্য ৭৪২টি নতুন পদ এবং হাসপাতালের জন্য ৩২টি পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিজিবির বর্তমান জনবল ও নতুন সংযোজন
নতুন পদ সৃষ্টির ফলে বিজিবির মোট জনবল দাঁড়াবে ৫৯,৭৩৫ জনে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ বিজিবি সীমান্ত নিরাপত্তা, বনাঞ্চল ও সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নতুন পদ কেন জরুরি
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, পাচার নিয়ন্ত্রণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কাজ করে। নতুন পদগুলো সৃষ্টির মাধ্যমে বিজিবি:
- সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান আরও কার্যকরভাবে করতে পারবে।
- দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পার্বত্য অঞ্চলে সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
- জরুরি সময়ে জনগণকে দ্রুত সেবা ও সহায়তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
সরকারের নীতি ও নিরাপত্তা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হবে।
এক কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, “নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বিজিবি শুধুমাত্র সীমান্ত রক্ষা করবে না, বরং জনসাধারণের সেবায় আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে। এটি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
দেশের অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীর তুলনা
বিজিবি ছাড়াও বাংলাদেশে আরও কিছু আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে, যেমন:
- র্যাব (RAB)
- বিএমপি (Bangladesh Ansar & VDP)
- কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন বাহিনী
তবে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী, কারণ দেশের স্থায়ী সীমানা রক্ষা, মাদক ও চোরাচালান রোধে এটি মূল ভূমিকা পালন করে।
সীমান্ত নিরাপত্তায় বিজিবির অবদান
বিজিবি দেশের সীমান্তরক্ষায় বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, যেমন:
- অবৈধ সীমান্ত পার হওয়া রোধ করা
- পাচার ও অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা
- পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখা
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
এই সকল কাজের জন্য পর্যাপ্ত জনবল থাকা অত্যন্ত জরুরি। নতুন পদ সৃষ্টির ফলে বিজিবি এসব কার্যক্রমে আরও সক্ষম হবে।
নতুন পদে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে
নতুন পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা পাবেন:
- প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ
- স্বাস্থ্যসেবা ও হাসপাতাল সুবিধা
- পারিবারিক সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা
এছাড়া, নতুন পদে যোগদানকারী কর্মকর্তা ও সৈনিকরা সীমান্তে নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “বিজিবিতে নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তা নীতি ও সীমান্ত সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যন্ত সময়োপযোগী। এটি দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।”
তারা আরও বলেন, নতুন পদ সৃষ্টি কেবলমাত্র সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নয়, বরং দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের সীমান্ত: সমস্যা ও সমাধান
বাংলাদেশের সীমান্তে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- অবৈধ পাচার ও ক্রিমিনাল কার্যক্রম
- চোরাচালান ও সন্ত্রাসবাদ
- দূরবর্তী অঞ্চলে জনগণকে সেবা পৌঁছে দেওয়ার সমস্যা
নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজিবি আরও কার্যকর হতে পারবে।
সরকারের এই পদক্ষেপ বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন পদ সৃষ্টির ফলে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলে সেবা, নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত হবে।
এছাড়া, এটি বিজিবির কর্মীদের ক্যারিয়ার ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য লাভজনক হবে।
MAH – 13495 I Signalbd.com



