বিশ্ব

মোদির ‘মাই ফ্রেন্ড’ এবার পুতিন!

Advertisement

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারও আলোচনায়। এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রকাশ্যে সম্বোধন করলেন ‘মাই ফ্রেন্ড’ বলে। সাম্প্রতিক এক ফোনালাপের পর এই মন্তব্য করেন মোদি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন সম্বোধন নতুন নয়, তবে এবার বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ফোনালাপে কী নিয়ে কথা হলো

সোমবার সন্ধ্যায় মোদি ও পুতিনের মধ্যে একটি দীর্ঘ টেলিফোনালাপ হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, আলোচনায় প্রধানত ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ছিল মূল বিষয়। মোদি আবারও স্পষ্ট করেন যে, ভারত সবসময় এই যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। তিনি বলেন, ইউক্রেন সংকট নিরসনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টাকে নয়াদিল্লি সমর্থন করবে।

পুতিনও মোদির এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে রাশিয়া–ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

মোদির কূটনৈতিক ভঙ্গি: ‘মাই ফ্রেন্ড’

পুতিনের ফোনালাপ শেষে নিজের ভেরিফায়েড সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে মোদি লিখেন, “ফোন করার জন্য এবং আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট পুতিন।”

এ বক্তব্য প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আবারও আলোচনায় আসেন মোদি। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও তিনি ‘মাই ফ্রেন্ড’ সম্বোধন করেছিলেন। ফলে এবার পুতিনকে একইভাবে সম্বোধন করায় নতুন বিতর্ক ও কূটনৈতিক ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো যেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে, সেখানে ভারত তুলনামূলক নিরপেক্ষ থেকেছে।

ভারত একদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে পশ্চিমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও বজায় রেখেছে। ফলে নয়াদিল্লির ভূমিকা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারসাম্যপূর্ণ ও কৌশলী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের পর ফোনালাপ

এর মাত্র কয়েকদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন আলাস্কায় বৈঠক করেন। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান নিয়ে বিভিন্ন সম্ভাবনা আলোচনা হয়। সেই বৈঠকের পরপরই পুতিন মোদিকে ফোন করায় অনেকের কাছে বিষয়টি কৌশলগত বলে মনে হয়েছে।

আলোচকরা বলছেন, রাশিয়া চাইছে ভারতকে পাশে রাখতে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

রাশিয়া–ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। সোভিয়েত যুগ থেকে এই সম্পর্ক গভীর। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং বাণিজ্যে রাশিয়া ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও, রাশিয়ার সঙ্গে সেই পুরনো বন্ধুত্বে তেমন ভাটা পড়েনি।

বিশেষত, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল কিনছে। এর ফলে দিল্লি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়লেও দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

কূটনৈতিক বার্তা কী

বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনকে ‘মাই ফ্রেন্ড’ সম্বোধন করার মধ্য দিয়ে মোদি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, ভারত এখনো রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। যদিও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও জোরদার হচ্ছে, তবে দিল্লি তাদের পুরনো কৌশল বজায় রেখে উভয় পক্ষের সঙ্গেই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চাইছে।

একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, “মোদি কূটনীতির এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে দেখাচ্ছেন যে, ভারত একই সঙ্গে পশ্চিমা শক্তি ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে সক্ষম।”

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ

ফোনালাপ শেষে মোদি আশা প্রকাশ করেছেন, রাশিয়া–ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও প্রযুক্তি সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ইউক্রেন সংকটের বাস্তবতায় ভারত কীভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে। মোদির ‘মাই ফ্রেন্ড’ মন্তব্য তাই শুধু সৌজন্যমূলক নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক সূক্ষ্ম বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মোদি ও পুতিনের সাম্প্রতিক ফোনালাপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান কতদূর এগোবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট— তারা চাইছে কূটনৈতিক সমাধান এবং ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক। আর মোদির মুখে পুতিনের জন্য ‘মাই ফ্রেন্ড’ সম্বোধন কেবল ব্যক্তিগত সৌজন্য নয়, বরং কৌশলগত বার্তাও বটে।

এম আর এম – ০৯২২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button