কর্মসংস্থান

অর্থসংকটে জাতিসংঘ, দেশে ফিরবেন ১৩১৩ শান্তিরক্ষী

Advertisement

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থ সংকট ও তহবিল ঘাটতির কারণে United Nations-এর শান্তি রক্ষা মিশনগুলো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বার্তা এসেছে — আগামী নয় মাসের মধ্যে অন্তত ১৩১৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে আবার দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি মিশনে প্রেরিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অংশ “আপাত্যালীন পরিকল্পনা” হিসেবে কমানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো — বিষয়, কারণ, প্রভাব, পরবর্তী পথ ও বাংলাদেশের জন্য কি অর্থ রাখে — সবটুকু একসাথে।

কারণ: কেন এটা হচ্ছে?

১. বাজেট ঘাটতি ও তহবিল সংকট
সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি রক্ষা মিশন পরিচালনায় তহবিলের ধারাবাহিক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস নিজেই স্বীকার করেছে যে কর্মসূচি ও মিশন পরিচালনায় নগদ প্রবাহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উল্লিখিত হয়েছে, অনেক মিশনে কর্মীর বেতন, লজিস্টিক সাপোর্ট, ইউনিফর্ম ও সরবরাহ ধংশের সম্ভাবনা রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য শান্তি রক্ষা মিশনের বাজেট প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন USD ছিল, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৮.২% কম।

২. বড় বাজেট হ্রাসের নির্দেশনা
সংস্থা তহবিল সংকট মোকাবেলায়, বিশেষভাবে শান্তি রক্ষা মিশনগুলোর জন্য পোশাকধারী (ট্রুপস) ও পুলিশ সদস্যদের ব্যয়ের ১৫ শতাংশ হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়েও মেলানো চিঠিতে এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
এ ধরনের হ্রাস নির্দেশ সাধারণ অর্থে নয় — বরং ন্যূনতম অবস্থা সামলাতে একটি আপৎকালীন পরিকল্পনার অংশ।

৩. প্রদানকারী দেশের অপ্রতুল অবদান ও দেরিতে অর্থ দেওয়া
শান্তি রক্ষা মিশনগুলোর ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রদের নির্ধারিত অর্থ বা প্রদত্ত অবদানের ধীরগতি বা অভাব বড় কারণ। এই কারণে নগদ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বড় একটি দেশ অর্থদানে সীমাবদ্ধতা দেখাচ্ছে, যা মিশন পরিচালনায় দায় বহনকারী দেশগুলোকে সংকটে ফেলছে।

৪. মিশনের পরিধি ও খরচ-কার্য পুনর্মূল্যায়ন
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অগ্রিম আলোচনায় উঠে এসেছে — নতুন বাস্তবতায় “কম খরচে বেশি কার্যকর” সমঝোতা প্রয়োজন। এমন নির্দেশনা রয়েছে যে, মিশনগুলোকে তাদের কাঠামো, সক্ষমতা ও বাজেট অবলম্বনে পুনর্বিন্যাস করা হবে।

এই সব কারণ একসাথে এ সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করেছে — যার ফলে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা প্রত্যাহার তালিকায় পড়েছে।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার: বিস্তারিত

বাংলাদেশ সময়ানুসারে জানা গেছে, United Nations-এর শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বিভাগের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স অফিস নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ১৪ অক্টোবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট মিশন থেকে কমানোর কথা বলা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে — উল্লেখিত পাঁচটি মিশন থেকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের আনুমানিক ১৩১৩ জন কমিয়ে আনা হবে। নিম্নরূপ:

  • UNMISS (দক্ষিণ সুদান) থেকে ≈ ৬১৭ জন
  • MINUSCA (মধ্য আফ্রিকা) থেকে ≈ ৩৪১ জন
  • UNISFA (সুদান-আবেই অঞ্চল) থেকে ≈ ২৬৮ জন
  • MONUSCO (কঙ্গো) থেকে ≈ ৭৯ জন
  • MINURSO (পশ্চিম সাহারা) থেকে ≈ ৮ জন

এই তথ্য সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে পাওয়া গেছে (বাংলাদেশ সরকারের এক সূত্র)।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যদি পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসে, তা দ্রুত বাংলাদেশকে জানানো হবে এবং বাংলাদেশকে মিশনের উদ্দেশ্য ও সমঝোতায় অব্যাহত সহযোগিতায় আশ্বস্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশির বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা ইতিহাস

বাংলাদেশ “নীল হেলমেট” পরা শান্তিরক্ষীর ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার বিশ্বের শান্তি রক্ষার মঞ্চে দাপুটে পা রেখেছিল বাংলাদেশ, ইরান-ইরাক পর্যবেক্ষক মিশনের মাধ্যমে। এরপর ধাপে ধাপে পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে দেশ থেকে সেনা ও পুলিশ নিয়োজিত হয়েছে।

আইএসপিআর ও সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, গত তিন দশকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও ৬৩টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। अहिले প্রায় ১০টি দেশে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর নিয়োজিততা রয়েছে।

এই বিষয়ে এখন যে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এসেছে, তা দেশের জন্য এক গভীর ভাবনার বিষয় — কারণ এটি দেশীয় সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর আন্তর্জাতিক মিশনে অংশগ্রহণের ধারায় একটি ঘাটতি এনে দিতে পারে।

কি কারণে বাংলাদেশ আয়োজন করেছে?

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তকে নিচের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে:

  • বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশির উপস্থিতি ও অবদান কমতে পারে।
  • অর্থ ও খরচের পরিবর্তে দেশীয় বাহিনীর অন্য কাজে মনোযোগ বাড়তে পারে।
  • বাংলাদেশ তার শান্তি রক্ষা মিশনে যে অভিজ্ঞতা ও সুনাম অর্জন করেছে, তা কিছুটা সঙ্কুচিত হতে পারে।
  • তবে এটি হয়তো সাময়িক — কারণ চিঠিতে বলা হয়েছে পরিবর্তন সম্ভব হলে দ্রুত অবহিত করা হবে।

প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক স্তরে —

  • এই ধরনের সেনা-পুলিশ প্রত্যাহার মিশনের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। একটি বিশেষ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ফলে মিশনগুলোকে “কম খরচে” কাজ করতে হবে — যা দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
  • শান্তি রক্ষা মিশনগুলোর স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রভাবিত হতে পারে।
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত ও বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে শান্তিরক্ষীদের ঘাটতির কারণে দায়িত্বরত কাজ ঠিকমতো চলা না-চলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য —

  • বাংলাদেশের জন্য এটি একটা সতর্ক সংকেত। দীর্ঘকাল ধরে যেই শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে এসেছে, তার ধারাবাহিকতায় বাধা পেতে পারে।
  • তবে দেশীয় সামরিক বাহিনী এই সময়টাতে নিজস্ব প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার সুযোগ পেতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবদান রক্ষায় নতুন কৌশল ও অংশগ্রহণের পথ খোলার প্রয়োজন।

পরবর্তী পদক্ষেপ ও সুপারিশ

আন্তর্জাতিকভাবে

  • যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় অর্থদাতা দেশদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে — কর্মসূচিত ও শান্তি রক্ষা মিশনগুলোর নিরাপদ ও কার্যকর চলমান রাখার জন্য সময় মতো অর্থ প্রদান নিশ্চিত করতে।
  • এছাড়া, শান্তি রক্ষা মিশনগুলোর কাঠামো, বাজেট ও অপারেশনের ক্ষেত্রে পুনর্মূল্যায়ন ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • নতুন বাস্তবতায় “কম কিন্তু কার্যকর” মডেল গড়ে তুলতে বলা হচ্ছে — যেখানে বড় বাজেট না হলেও দক্ষতা ও কার্যকারিতা সঠিকভাবে বজায় থাকবে।

বাংলাদেশের জন্য

  • বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলোতে আলোচনায় সক্রিয় হতে হবে যাতে দেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবদান ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • দেশে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ আরও উন্নত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কারণ অন্য দেশের তুলনায় বাজেট বা কার্যক্রম কমলেও দক্ষতা ও প্রাসঙ্গিকতা বাড়িয়ে দেশের অবস্থান নিশ্চিত করা যেতে পারে।
  • পরবর্তী সময়ে বিদেশি মিশনে অংশগ্রহণ ও নিয়োগের ক্ষেত্রে মান ও সক্ষমতার দিক দিয়ে আরও কৌশলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

অর্থ সংকটের কারণে রাষ্ট্র-সচল মঞ্চে মানুষিক হ্রাস পাচ্ছে — যেখানে শান্তি রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ শুধু “সংখ্যার হ্রাস” নয় — বরং দেশের আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় অংশগ্রহণ ও প্রতিফলনের দৃষ্টিকোণ থেকে বড় বিষয়ে পরিনত হতে পারে।

১৩১৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর প্রত্যাহার শুধু একটি পরিসংখ্যাণ নয়; এটি একটি সময়োপযোগী সংকেত যে পরিবর্তনশীল বিশ্বে নতুন কৌশল, নতুন ভূমিকা ও নতুন সক্ষমতা জরুরি। বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব শান্তি রক্ষা ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের নতুন দিকনির্দেশনা আবিষ্কার করতে পারে।

ভবিষ্যতে কি এই প্রত্যাহার সাময়িক হবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের সূচনা — তা সময় দেখাবে। তবে এখনই সময় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার; কারণ শান্তি রক্ষা আজ শুধু নিয়োগ বা সংখ্যা নয়, দক্ষতা, প্রাসঙ্গিকতা ও আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জনের arenas এক হয়ে উঠেছে।

MAH – 13376 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button