
গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৩২৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ জনে।
মৃত্যু ও আক্রান্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি
শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ। নারীদের বয়স যথাক্রমে ৬০ ও ১৩ বছর, আর পুরুষটির বয়স ২৩ বছর। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও জেলাগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ২৩০ জন রোগী।
বিভাগভিত্তিক রোগীর সংখ্যা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ৬৬ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪১ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ৭৩৫ জন রোগী। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি রোগী, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ মাসিক সংখ্যা। মৃত্যুর মধ্যে ৫৬ জন পুরুষ এবং ৪২ জন নারী। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
ডেঙ্গুর বিস্তার ও ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন দ্রুত বেড়ে যায়, যার ফলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। শহরাঞ্চল ছাড়াও এখন গ্রামীণ এলাকায়ও রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা শরীরে র্যাশ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সরকারি উদ্যোগ ও করণীয়
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা, ফুলের টব ও জলাধারে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা এবং মশারি ব্যবহার করা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর।
বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন বলেন, “ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অনেকে দেরি করে হাসপাতালে আসেন। এতে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে পারে। তাই প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
সারসংক্ষেপ
ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে এবং মৃত্যুও অব্যাহত রয়েছে। সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতনতা ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী কয়েক মাস পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে—তাই এখনই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এম আর এম – ০৭৫৬, Signalbd.com