
গত ২৫ জুলাই শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালিত বিশেষ অভিযানে দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। আটক দুই নারীর একজন রোহিঙ্গা নারী বলে জানা গেছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, আটককৃত দুই নারী বোরকার ভেতরে পোশাকের ভাঁজের মধ্যে ইয়াবা লুকিয়ে পাচারের চেষ্টা করছিলেন। তাদের এই নিষিদ্ধ কার্যক্রম সনাক্ত করে বিজিবি তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা কে?
গ্রেপ্তার দুই নারীর মধ্যে একজন হলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুলাতলী গ্রামের মোকতার আহম্মদের স্ত্রী তৈয়বা আক্তার (৩৯), এবং অপরজন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এক নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নূর আলমের স্ত্রী দিলবার খাতুন (৩২)। তাঁরা ইয়াবা নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাচারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি।
কীভাবে ধরা পড়লো?
বিজিবির রামু-৩০ ব্যাটালিয়নের একটি বিশেষ টহলদল আঞ্চলিক সড়ক মরিচ্চ্যা এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। সন্ধ্যা সাড়ে আটটার সময় সন্দেহজনক একটি ইজিবাইককে থামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। ইজিবাইকের দুই নারী যাত্রী সন্দেহজনক আচরণ করায় তাদের নামিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তল্লাশি চালিয়ে বোরকার ভেতরে পোশাকের ভাঁজের মধ্যে ইয়াবার চালান পাওয়া যায়।
বিজিবির মহানুভব অভিযান ও পরিসংখ্যান
রামু-৩০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানান, মাদক পাচার দমনে বিজিবির অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং গ্রেপ্তার দুই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ বছর বিভিন্ন অভিযানে বিজিবি মোট ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ২১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৭ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ২৭ জন রোহিঙ্গা পুরুষ, ২৪ জন বাংলাদেশি নারী, এবং ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী রয়েছে।
ইয়াবা পাচার ও এর ভয়াবহ প্রভাব
মাদক পাচার, বিশেষ করে ইয়াবা, দেশের তরুণ সমাজ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি। ইয়াবা নির্ভরতা শুধু ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই বিপজ্জনক নয়, এর ফলে পরিবার ও সমাজের সামাজিক অবক্ষয় ঘটে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে রোহিঙ্গা শিবির থেকে মাদকের ব্যাপক প্রবাহ দেশীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও মাদক পাচার
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্রায়ই মাদক পাচারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য রোহিঙ্গা শিবির থেকে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে পাচার হচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীদেরও এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজনীয়তা বারিয়ে দিয়েছে।
বিজিবির ভূমিকাঃ সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থান
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। অবৈধ পাচার ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য ধ্বংস করে সীমান্ত এলাকা নিরাপদ করার জন্য বিজিবি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মাদকদ্রব্যের চূড়ান্ত নিষিদ্ধকরণ ও জনসচেতনতা
সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একযোগে মাদক নির্মূল অভিযান চালাতে হবে। তরুণ সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে শিক্ষাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মাদকাসক্তি রোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ফলাফল ও আগামী কর্মপরিকল্পনা
বিজিবির রামু-৩০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী দিনে মাদক পাচার রোধে আরও শক্তিশালী ও সমন্বিত অভিযান চলবে। সীমান্তের সব পয়েন্টে নজরদারি জোরদার করা হবে, যাতে অবৈধ মাদকবাহী কেউ পাস পেতে না পারে।
সচেতন নাগরিক সমাজ ও ভবিষ্যৎ
মাদক পাচার এবং ব্যবহার বন্ধে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভরতা যথেষ্ট নয়। সচেতন নাগরিক সমাজ গঠন, শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যকর সমাজ বিনির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
কক্সবাজারের রামুতে ইয়াবা পাচারের চেষ্টা রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অভিযান সফল হয়। পোশাকের ভাঁজে ইয়াবা লুকিয়ে পাচারের পরিকল্পনা ধ্বংস হয়। দুই নারী, যার মধ্যে একজন রোহিঙ্গা নারী, গ্রেপ্তার হন। বিজিবি’র অব্যাহত অভিযান ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে দেশের মাদক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কীভাবে সচেতন থাকবেন?
- মাদক সম্পর্কিত যে কোনো সন্দেহজনক তথ্য পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
- যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
- মাদকবিরোধী প্রচারণায় অংশ নিন এবং মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে অবদান রাখুন।