ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি বেকার, স্নাতক ডিগ্রিধারীরা শীর্ষে

শ্রমশক্তি জরিপে বাংলাদেশের বেকারের চিত্র, শিক্ষিত তরুণদের উদ্বেগ বৃদ্ধি
বেকারের সর্বাধিক সংখ্যা ঢাকা বিভাগে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের বেকারের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যা রয়েছে ঢাকা বিভাগে, যা প্রায় ৬ লাখ ৮৭ হাজার। এরপরের অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম (৫ লাখ ৮৪ হাজার) ও রাজশাহী (৩ লাখ ৫৭ হাজার)। খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে যথাক্রমে ৩ লাখ ৩১ হাজার, ২ লাখ ১৬ হাজার, ২ লাখ ৬ হাজার, ১ লাখ ৩৯ হাজার ও ১ লাখ ৪ হাজার বেকার রয়েছে।
শ্রমশক্তি জরিপে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজও করেননি এবং এক মাস ধরে কাজের প্রত্যাশা রাখেন, তাদের বেকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই সংজ্ঞা অনুযায়ী সাপ্তাহিক এক ঘণ্টা কাজ করলে জীবিকা নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব।
শিক্ষিতরা, বিশেষ করে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা, সবচেয়ে বেশি বেকার
জরিপে দেখা গেছে, দেশের মোট বেকারের মধ্যে ১৩.৫ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী। উচ্চমাধ্যমিক পাস বেকারের হার ৭.১৩ শতাংশ। অপরদিকে, যাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তারা মোট বেকারের মাত্র ১.২৫ শতাংশ।
যুব সমাজের মধ্যে বেকারত্বের মাত্রা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ বেকার, যা মোট বেকারের ৭৬ শতাংশ। এই বয়সী বেকারদের মধ্যে ২৯ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী, অর্থাৎ প্রতি তিনজন স্নাতক ডিগ্রিধারীর একজন বেকার।
চাকরি খোঁজার পদ্ধতি
বিবিএস জরিপ অনুযায়ী, চাকরি খোঁজার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। প্রায় ৩৬ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী আত্মীয় ও বন্ধুদের মাধ্যমে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকরি খুঁজেছেন ২৬ শতাংশ, এবং ১২ শতাংশ সরাসরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে চাকরি চেয়েছেন।
বেকারত্বের ধরন
বেকারত্বকে প্রধানত তিন ধরনের ভাগ করা যায়:
- সামঞ্জস্যহীন বেকারত্ব – শ্রমবাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি থাকলে।
- বাণিজ্য চক্রজনিত বেকারত্ব – অর্থনীতিতে চাঙাভাব বা মন্দাভাবের কারণে।
- কাঠামোগত বেকারত্ব – প্রযুক্তি পরিবর্তন বা দক্ষতা ঘাটতির কারণে।
উদাহরণস্বরূপ, উত্তরবঙ্গ ও হাওর অঞ্চলে সামঞ্জস্যহীন বেকারত্ব বেশি। কোভিড মহামারির সময় বাণিজ্য চক্রজনিত বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছিল।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনা
গত বছরের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বেকারের সংখ্যা সামান্য কম ছিল। তবে শিক্ষিত বেকারের অংশগ্রহণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে স্নাতক ও উচ্চশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারের হার উদ্বেগজনক।
প্রভাব ও সামাজিক দিক
বেকারত্ব শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, সামাজিক ও মানসিক চাপও সৃষ্টি করে। শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব মোটিভেশন হ্রাস, মানসিক উদ্বেগ এবং সামাজিক অসন্তুষ্টি বাড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আনা জরুরি, যাতে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়।
সরকারের ভূমিকা ও পদক্ষেপ
সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন চাকরি মেলা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্প, যা শিক্ষিত যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। তবে কর্মসংস্থানের তীব্র চাহিদা মোকাবিলায় আরও দীর্ঘমেয়াদী নীতি ও বৃত্তিমূলক প্রোগ্রাম প্রয়োজন।
বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতি ও শ্রম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বেকারত্বের হার বেশি হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো শিক্ষিতদের উচ্চ প্রত্যাশা এবং দক্ষতার সঙ্গে চাকরির মিল না থাকা।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিল্প, প্রযুক্তি ও সেবা খাতের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
শেষ কথা
ঢাকা বিভাগে বেকারের সংখ্যা দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে স্নাতক ডিগ্রিধারী ও যুব সমাজের মধ্যে বেকারত্ব উদ্বেগজনক। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার, শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মিলিতভাবে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে বেকারত্বের হার কমানো যায় এবং যুব সমাজের জন্য সম্ভাব্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
এম আর এম – ১৩০৪,Signalbd.com