কর্মসংস্থান

বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও যোগ দিচ্ছেন না ঢাবি ছাত্র হাবিব, হবেন উদ্যোক্তা

সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা ছেড়ে কৃষিতে ঝুঁকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিব রহমান

জীবনের মোড় ঘোরানো এক সিদ্ধান্ত

৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় পোস্টাল ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র হাবিব রহমান। তবে এই সম্মানজনক সরকারি চাকরির সুযোগ থাকার পরও তিনি তাতে যোগ দিচ্ছেন না। বরং নিজের স্বপ্ন ও আদর্শকে অনুসরণ করে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।

হাবিবের এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কেউ কেউ আবার তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

গ্রামের ছেলেটি যেভাবে পৌঁছাল ঢাবি পর্যন্ত

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের ছেলে হাবিবের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের মাদ্রাসায়। বাগমারী ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে।

স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) থেকে এমবিএ শেষ করেন। আর এখানেই তৈরি হয় তার জীবনের নতুন স্বপ্ন—উদ্যোক্তা হওয়া।

বিসিএস নয়, স্বপ্নের দিকে যাত্রা

হাবিব জানান, তার মূল লক্ষ্য ছিল ফরেন ক্যাডারে যোগ দেওয়া। কিন্তু যখন তিনি দেখতে পান যে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পোস্টাল ক্যাডারে, তখন তার আর যোগদানের আগ্রহ থাকে না।

তিনি বলেন, “আমি শুরু থেকেই উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন পারিপার্শ্বিক চাপ ছিল বিসিএস করার। আইবিএ-তে ভর্তির পর বুঝলাম, হালাল পথে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে সুন্দর উপায় হলো উদ্যোক্তা হওয়া। এই সিদ্ধান্তই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”

কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা

হাবিব আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি তার আলাদা আগ্রহ ছিল। “আমি প্রযুক্তি আর বাজার বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কৃষি একটি টেকসই খাত। এই খাতে কখনো স্থায়ী পতনের আশঙ্কা নেই। বরং ভবিষ্যতে এর প্রয়োজন আরও বাড়বে,”—বলেন তিনি।

বর্তমানে হাবিব কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে কাজ করছেন। তার লক্ষ্য, দেশীয় কৃষিপণ্যে বিদেশে রপ্তানি সক্ষমতা তৈরি করা।

চাকরি ছেড়ে সাহসী সিদ্ধান্ত

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হাবিব এর আগে কৃষি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি করেছিলেন। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য মাত্র আড়াই মাস পরেই সেই চাকরি ছেড়ে দেন।

তিনি বলেন, “চাকরির জীবন আমার জন্য নয়। অন্যের অধীনে থেকে আমি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই চাকরি ছেড়ে দিই।”

‘রুপাই অ্যাগ্রো’ ও উদ্যোক্তা হাবিব

বর্তমানে হাবিবের কৃষি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘রুপাই অ্যাগ্রো’। এখানে তিনি কয়েকটি পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট পরিচালনা করছেন। শিগগিরই এটি ফুল-টাইম ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।

তার পরিকল্পনায় রয়েছে—দেশে যেসব কৃষিপণ্য আমদানিনির্ভর, সেগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানির উপযোগী করা। দেশের কৃষি খাতের রূপান্তর ঘটাতে চান তিনি।

এক শিক্ষক, লেখক ও উদ্যোক্তা—তিন রূপে হাবিব

কৃষি উদ্যোক্তা ছাড়াও হাবিবের আরও দুটি পরিচয় রয়েছে—তিনি একজন লেখক এবং ইংরেজি প্রশিক্ষক। ‘জয়েন ইংলিশ’ নামে তার একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যার ফলোয়ার সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। এখানে তিনি ফ্রি হ্যান্ডরাইটিং কোর্স করান এবং এই বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন।

এই অনলাইন আয় থেকেই তিনি তার কৃষি গবেষণা ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘আমি নিজেকে চাকরির জন্য তৈরি করিনি’ — হাবিব

হাবিব বলেন, “আমি জীবনে যা শিখেছি, তা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই। নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। চাকরির রুটিন জীবন আমার জন্য ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, নিজের উপর বিশ্বাস রাখলেই সব সম্ভব।”

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে

হাবিবের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা এখন অনেক তরুণের মাঝেই দেখা যাচ্ছে। সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা ও সম্মান থাকা সত্ত্বেও অনেকে ঝুঁকছেন স্বাধীন পথে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাবিবের এই পথচলা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে। দেশের কৃষি খাত যেমন উপকৃত হবে, তেমনই তৈরি হবে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ।

“উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু নিজের জন্য কাজ নয়, বরং সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ খোঁজা”—হাবিব রহমান

সারসংক্ষেপ 

হাবিব রহমানের গল্প প্রমাণ করে যে জীবন শুধু সরকারি চাকরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আত্মবিশ্বাস, সঠিক পরিকল্পনা ও সাহসিকতা থাকলে নিজস্ব পথে চলেও সফল হওয়া সম্ভব। হয়তো একদিন তার প্রতিষ্ঠান রুপাই অ্যাগ্রো বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী উদাহরণ হয়ে উঠবে।

এম আর এম – ০২০০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button