কর্মসংস্থান

বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে, এবার একসঙ্গে বিসিএস ক্যাডার

 বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, তারপর বিবাহ। সেই সম্পর্কেই এবার যুক্ত হলো নতুন মাইলফলক — ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় দুজনেই একসঙ্গে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ক্যাডার হলেন অভিজিৎ ও স্বর্ণা। প্রেম ও পরিশ্রমের জয়গাথা রচনার অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প এটি।

শুরুটা একটি মেসেজ থেকে

২০১৬ সালের মার্চ মাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সাধারণ টেক্সট মেসেজ—”তোর কি আমার নাম মনে আছে?” এই একটি বাক্য থেকেই শুরু হয়েছিল গল্প। সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়, জন্ম নেয় ভালোবাসা। এই সম্পর্কই আজ তাঁদের পৌঁছে দিয়েছে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গৌরবময় শিখরে।

পরিচয় ও শিক্ষাজীবন

অভিজিৎ দেব ও স্বর্ণা শাহা তুশী, দুজনেই বাংলাদেশের খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন যথাক্রমে ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদে।
অভিজিৎ শেষ করেন ভেটেরিনারি মেডিসিনে স্নাতকোত্তর, আর স্বর্ণা কীটতত্ত্ব বিভাগে মাস্টার্স করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একে অপরের ‘বেস্টফ্রেন্ড’ ছিলেন তাঁরা।

বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, তারপর বিয়ে

ছয় বছর দীর্ঘ সম্পর্কের পর ২০২৩ সালের ৯ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন অভিজিৎ ও স্বর্ণা। তাঁদের প্রেমজীবন ছিল একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার অনন্য উদাহরণ।

কোভিড-১৯ মহামারিকালেও তাঁরা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা। হলে থাকার সুযোগ না থাকায় বই ও নোট কুরিয়ারে পাঠিয়ে একে অপরের পড়াশোনায় সহায়তা করেছেন।

বিসিএসের প্রস্তুতি: একসঙ্গে পথচলা

বিয়ের পরই শুরু হয় আরও বড় স্বপ্ন পূরণের যাত্রা। ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি চলতে থাকে একসঙ্গে।
স্বর্ণা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আমরা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতাম। আমি সিরিয়াসলি পড়া শুরু করি ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর, আর অভি ইন্টার্নশিপ চলাকালীন শুরু করে।”

পরিবারের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। বিয়ের এক সপ্তাহ পরেই ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা থাকায় ঢাকায় থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। পরিবার সবসময় পাশে থেকেছে।

ফলাফল: একসঙ্গে বিসিএস ক্যাডার

সম্প্রতি প্রকাশিত ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অভিজিৎ প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে এবং স্বর্ণা কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগে স্বর্ণা ৪৩তম বিসিএসেও কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

স্বর্ণা বলেন, “এইবার আমি অপেক্ষা করছিলাম অভির ফলাফলের জন্য। কারণ ও একটিমাত্র ক্যাডারে আবেদন করেছিল—প্রাণিসম্পদ। ওর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জেনে খুব ভালো লাগছে।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: থেমে না যাওয়া

এই অর্জনেই থেমে যেতে চান না অভিজিৎ ও স্বর্ণা। দুজনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পিএইচডি সম্পন্ন করে দেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে গবেষণায় অবদান রাখতে চান।

স্বর্ণা বলেন, “আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা। একইসাথে দেশের জন্য কাজ করতে চাই—যাতে আমাদের অর্জন আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করে।”

তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা

এই গল্প শুধু ভালোবাসার নয়, এটি স্বপ্ন ও পরিশ্রমেরও গল্প। একসাথে চলা, একে অপরকে অনুপ্রাণিত করা, এবং সফলতার পথ একসাথে তৈরি করা—নিশ্চয়ই এটি আজকের তরুণদের জন্য এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।

“আমি সবসময় চেয়েছি ওর স্বপ্ন পূরণ হোক। আজ আমরা একসাথে বিসিএস ক্যাডার—এটি আমাদের সম্পর্কের আরেকটি বড় জয়।” — স্বর্ণা শাহা তুশী

উপসংহার

বন্ধুত্ব, প্রেম, বিয়ে আর পেশাগত সাফল্যের এমন নিখুঁত সমন্বয় খুব কমই দেখা যায়। অভিজিৎ ও স্বর্ণার গল্প আমাদের দেখিয়ে দেয়—যদি লক্ষ্য ঠিক থাকে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি থাকে, তবে যেকোনো কিছুই সম্ভব।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: আমাদের শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থা কি এমন আরও যুগলকে উৎসাহ দেবে, না কি এই গল্প এক ব্যতিক্রমই হয়ে থাকবে?

এম আর এম – ০১৩৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button