শিক্ষা

যশোরে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ

Advertisement

যশোর শহরের ব্যস্ততম এলাকা মনিহার চৌরাস্তা আজ বুধবার দুপুরে রূপ নেয় এক আন্দোলনের মঞ্চে। ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে মনিহার চত্বরে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

এতে যশোরের সঙ্গে আশপাশের জেলার সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে থেমে যায় শত শত যানবাহন, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। শহরের চারপাশে নেমে আসে স্থবিরতা।

আন্দোলনের পেছনে কী আছে?

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূল কারণ ছয় দফা দাবি, যার মধ্যে অন্যতম:

  1. ক্র্যাফট ইন্সপেক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল করা
    শিক্ষার্থীদের দাবি, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইন্সপেক্টরদের অবৈধভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যা আদালতের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে।
  2. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়স সীমা পুনর্বহাল করা
    বর্তমানে এই কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
  3. পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদের নিশ্চয়তা
    চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত পদে নিশ্চিত নিয়োগের দাবি তোলা হয়েছে।

এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

কীভাবে প্রভাব পড়ছে শহরে?

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া অবরোধের কারণে মনিহার স্ট্যান্ডে আটকে যায় দূরপাল্লার সব বাস। যশোর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া ও আসার সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেসরকারি গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশাও চলাচল করতে পারেনি। সাধারণ যাত্রীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। অনেকে দীর্ঘক্ষণ যানবাহনে বসে ছিলেন, আবার অনেককে গন্তব্যে পৌঁছাতে হাঁটতে হয়েছে।

একজন যাত্রী বলেন, “আমার বাস আজ দুপুর ১টায় ছাড়ার কথা ছিল। এখন তিন ঘণ্টা হয়ে গেছে, নড়াচড়াও হচ্ছে না। অফিসে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

প্রশাসনের অবস্থান

শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপে যাওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন।

যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন,

“শিক্ষার্থীরা মনিহার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। এতে চারটি প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজট হয়েছে। আমরা তাঁদের শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক থেকে সরাতে চেষ্টা করছি।”

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ও প্রভাব

শিক্ষার্থীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা এই দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন তাঁরা আর সময়ক্ষেপণ চান না।

তাঁরা জানান, “আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের কথা উপেক্ষা করা হয়েছে। এবার আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।”

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের আন্দোলন প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে, যদি না সরকার দ্রুত আলোচনায় বসে সমাধানের পথ খোঁজে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি বিবেচনায় নিয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছানো জরুরি।


যশোরে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একটি বৃহত্তর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ ও প্রশাসনিক উদাসীনতা থেকে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সংকট। সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা, অন্যথায় এমন পরিস্থিতি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button