
চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে বাংলাদেশে প্রবাসী নাগরিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ পৌঁছেছে ১৭১ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অক্টোবরের প্রথম ১৯ দিনে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের দৈনিক গড় প্রবাহ প্রায় ৯ কোটি ডলার।
অক্টোবর মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহের বিশদ
প্রতিদিন গড় ৯ কোটি ডলারের হারে রেমিট্যান্স আসার ফলে অক্টোবরের ১৯ দিনে মোট ১৭১ কোটি ডলার দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, এক বছরে প্রবাসী আয় প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
একদিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স প্রাপ্তির তথ্যও সামনে এসেছে। ১৯ অক্টোবর একদিনে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৯২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা বছরের ব্যবধানে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
রেমিট্যান্সের পূর্ববর্তী প্রবণতা
গত কয়েক মাসের রেমিট্যান্সের ধারা অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আগষ্ট এবং জুলাই মাসে যথাক্রমে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার এবং ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধি, দামে স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করছে।
প্রভাব এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব
রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ঘরোয়া বিনিয়োগ, ভোক্তা ব্যয়, এবং সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। বিশেষ করে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রীও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবাহ নিয়মিতভাবে বৃদ্ধির ধারায় থাকলে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরও শক্তিশালী হবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ
অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। প্রধান কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন:
- প্রবাসী কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি: মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় প্রবাসীদের আয়ের বৃদ্ধি।
- উন্নত আর্থিক সেবা: ব্যাংকিং চ্যানেল এবং ডিজিটাল অর্থপ্রেরণার সুবিধা বৃদ্ধি।
- মুদ্রা বিনিময় হার ও সেবার সহজলভ্যতা: দেশে প্রেরিত অর্থ দ্রুত এবং নিরাপদে পৌঁছানো।
এছাড়াও, প্রবাসীরা দেশে অর্থ প্রেরণে আগ্রহী হওয়ার কারণ হিসেবে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক নীতি এবং সরকারের সহজলভ্য প্রেরণার প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ এবং বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স শুধু ব্যক্তিগত পরিবারের জন্য নয়, সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায়, মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখে এবং দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করে।
অর্থনীতিবিদরা আরও বলেছেন, প্রবাসীদের আয় বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা উৎপাদন ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। সরকারের জন্য এই রেমিট্যান্স প্রবাহ নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক।
ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট
বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী যে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। কারণ, প্রবাসী কর্মসংস্থান স্থিতিশীল এবং বিদেশে আয়ের সুযোগ বাড়ছে। এছাড়াও, ডিজিটাল ও ব্যাংকিং চ্যানেলের সহজলভ্যতা রেমিট্যান্স প্রেরণাকে আরও সক্রিয় করছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি এক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এম আর এম – ১৮৬৩,Signalbd.com