
হজ কার্যক্রমের অর্থ জমা দেওয়ার সুবিধার্থে আগামী শনিবার (১৮ অক্টোবর) ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা ও উপশাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হজ নিবন্ধনের অর্থ জমা দিতে আগত আমানতকারীরা উপস্থিত থাকা পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক হজ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ও উপশাখা আগামী শনিবার (১৮ অক্টোবর) খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী এই নির্দেশনা জারি করা হয় বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের বিস্তারিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হজ নিবন্ধনের অর্থ জমা দেওয়ার জন্য আমানতকারীরা যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাংকে উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো খোলা রাখতে হবে। অর্থাৎ, শনিবারের ছুটির দিন হলেও ব্যাংকের হজ-সম্পর্কিত শাখাগুলোতে নিয়মিত ব্যাংকিং সেবা চলবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, হজ নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে সময়মতো সবাই তাদের অর্থ জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে।
কেন শনিবার ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত
প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হজ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। নিবন্ধন, অর্থ জমা, যাচাইকরণ—এসব প্রক্রিয়া সময়সীমা মেনে শেষ করতে হয়।
এ বছর হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় অনেক ব্যাংক শাখায় ভিড় বাড়ছে। এজন্য শনিবারও ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে হজযাত্রীদের সময়মতো নিবন্ধন সম্পন্ন করতে সুবিধা হবে।
কোন কোন ব্যাংক শাখা খোলা থাকবে
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শুধুমাত্র হজ কার্যক্রমে নিয়োজিত ব্যাংকগুলোর নির্দিষ্ট শাখা ও উপশাখাগুলো শনিবার খোলা থাকবে।
সাধারণ ব্যাংক লেনদেন বা অন্য কোনো কার্যক্রম ওই দিন চলবে না।
হজ নিবন্ধন কার্যক্রমে যুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক, সামাজিক ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক।
প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোন শাখাগুলো খোলা থাকবে, সে তথ্য প্রকাশ করবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী যেকোনো ব্যাংককে প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট দিনে খোলা রাখার বা বন্ধ রাখার ক্ষমতা রাখে।
এই ধারার আওতায়ই হজ কার্যক্রমের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শনিবার ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ধরনের উদ্যোগ শুধুমাত্র ধর্মীয় কার্যক্রম নয়, বরং ব্যাংকিং খাতের সেবা কার্যক্রমকে জনগণের কাছে আরও সহজলভ্য করে তোলে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি
বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
একজন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, “আমরা আগের দিনই ক্যাশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেব। গ্রাহকরা যেন নির্বিঘ্নে অর্থ জমা দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “হজ কার্যক্রম একটি জাতীয় গুরুত্বের বিষয়। তাই শনিবার ছুটির দিন হলেও কর্মীরা আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।”
হজ কার্যক্রম ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া
এ বছর হজে যাওয়ার জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যারা সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন, তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে হচ্ছে।
হজ নিবন্ধনের অর্থ জমা দেওয়ার শেষ সময় ঘনিয়ে আসায় অনেকেই শেষ মুহূর্তে ব্যাংকে ভিড় করছেন।
এই অবস্থায় শনিবার ব্যাংক খোলা রাখলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই না কোনো হজযাত্রী ব্যাংক বন্ধ থাকায় নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত হোক। তাই শনিবার ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও প্রয়োজনে নেওয়া হবে, যাতে জনগণ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কার্যক্রমে সহজে অংশ নিতে পারেন।”
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, হজের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের সময় ব্যাংক খোলা রাখা একটি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুল হক বলেন, “এটি ধর্মীয় কার্যক্রমের প্রতি সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলতার প্রকাশ। ব্যাংক খোলা থাকলে জনগণের ভোগান্তি কমবে এবং অর্থপ্রবাহও স্বাভাবিক থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক যদি নিয়মিতভাবে এমন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ব্যাংকিং সেবার প্রতি জনগণের আস্থা আরও বাড়বে।”
ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত আরও প্রয়োজন
বাংলাদেশে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও জাতীয় কার্যক্রমের সময় ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে গ্রাহকদের অসুবিধা হয়।
বিশেষ করে হজ, কর জমা, বা শিক্ষা সংক্রান্ত ফি প্রদানের সময় ব্যাংক খোলা রাখলে তা জনগণের জন্য বড় সহায়তা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুপ্রাণিত করবে জনসেবায় নমনীয়তা আনতে।
হজ কার্যক্রমের অর্থ জমা দেওয়ার সুবিধার্থে শনিবার ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং ধর্মীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে।
তবে এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ের সমন্বয়ের ওপর।
এম আর এম – ১৮১০,Signalbd.com