ব্যাংক

অক্টোবরের ৮ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৮০ কোটি ডলার

Advertisement

চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ৮ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের তাজা তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে এই প্রবাহ ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে ।

দেশে রেমিট্যান্সের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, অক্টোবরের প্রথম ৮ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শুধুমাত্র ৮ অক্টোবর একদিনে দেশে এসেছে ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার।

তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩৯ কোটি ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪.৪০ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রবাসী আয়ের প্রভাব ও দেশের অর্থনীতি

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই অর্থ দেশের গ্রামীণ ও নগর এলাকার ভোক্তা বাজার, ব্যাংকিং খাত এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে, স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে এবং ভাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ও অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ চালাতে প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের এই রেকর্ডসম্ভব রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়াও, এটি স্থানীয় মুদ্রার স্থিতিশীলতা ও আমদানী খাতে সাপোর্ট প্রদান করছে।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ধারা

গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স, আর আগস্ট ও জুলাইয়ে যথাক্রমে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ও ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার এসেছে। চলতি অর্থবছর জুড়ে প্রবাসীরা এখন পর্যন্ত পাঠিয়েছেন প্রায় ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রবাসী কর্মীদের আয় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল ট্রান্সফার পদ্ধতি সহজ হওয়ায় অধিকাংশ প্রবাসী অনলাইন মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন। তৃতীয়ত, বিশ্বজুড়ে কাজের বাজারের ধীর কিন্তু ধারাবাহিক উন্নতি প্রবাসীদের আয় বাড়াতে সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকও বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে যাতে রেমিট্যান্স প্রেরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়। ফলে, প্রবাসীদের জন্য প্রেরণ খরচ কমেছে এবং তদনুযায়ী দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় খরচ বৃদ্ধি—সবই প্রবাসী আয়ের কারণে সম্ভব হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই প্রবাহ দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও সরকারি রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করছেন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীলতা কমানোও জরুরি।

বিশ্লেষক মতামত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য একটি শক্ত ভিত্তি। তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে রেমিট্যান্সের সঙ্গে উৎপাদনমুখী খাতের সমন্বয় প্রয়োজন।

ড. মাহবুবুর রহমান, একজন অর্থনীতিবিদ, বলেন, “রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে। তবে শুধু রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখবে না।”

অক্টোবরের প্রথম ৮ দিনে দেশে প্রবাসী আয় ৮০ কোটি ডলারের বেশি পৌঁছানো দেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। এটি বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, স্থানীয় বাজারের স্থিতিশীলতা ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, দেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্তিশালী করতে স্থানীয় উৎপাদন এবং বিনিয়োগ খাতের উন্নয়নও সমানভাবে জরুরি।

এম আর এম – ১৭০৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button