ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ড নিতে আর প্রয়োজন নেই আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র

Advertisement

বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন এসেছে। এতদিন ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে আবেদনকারীদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন বা রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (Proof of Submission of Return – PSR) দেখাতে হতো। তবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই বাধ্যবাধকতা পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) ধারীরা তাদের সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র জমা দিলেই ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন।

এ সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীসহ যেসব ব্যক্তি করযোগ্য নয়, তারা সহজেই ক্রেডিট কার্ড পেতে পারবেন। এর আগে করযোগ্য নন এমন গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার মুখোমুখি হতো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) সূত্রে জানা গেছে, ক্রেডিট কার্ডের জন্য রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতা সরানোর পিছনে মূল কারণ শিক্ষার্থীদের আর্থিক লেনদেন সহজ করা। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী টিউশন ফি, অনলাইন কোর্স, ই-কমার্স, মোবাইল রিচার্জ এবং অন্যান্য দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন।

ক্রেডিট কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত ৫৪ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্রেডিট কার্ড লেনদেন হয়। শুধু জুলাই মাসে ৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কারণ এটি গ্রাহকের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে, বিশেষ করে নগদ অর্থ বহন না করেই কেনাকাটা ও বিল পরিশোধের সুবিধা দেয়।

ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সহজ প্রক্রিয়া

এখন প্রতিটি ব্যাংক অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন গ্রহণ করছে। প্রক্রিয়া সহজ ও সময়সাশ্রয়ী:

  1. অনলাইন আবেদন: ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে আবেদন জমা দেওয়া যায়।
  2. ফরম পূরণ: আবেদন করার পর ব্যাংকের বিক্রয়কর্মীরা আপনার ঠিকানায় এসে ফরম পূরণ করবেন।
  3. ডেলিভারি: নির্ধারিত সময়ে ক্রেডিট কার্ড কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে। কার্ডের সাথে পিনও দেওয়া হবে।
  4. অতিরিক্ত হিসাব খোলার প্রয়োজন নেই: ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক নয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ইত্যাদি)
  • পুরোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাধারণত শেষ ৬ মাসের)
  • নমিনির পরিচয়পত্র ও ছবি
  • রেফারেন্স (সাধারণত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অন্য গ্রাহকের নাম)

ব্যাংক যাচাই করবে আপনার ক্রেডিট স্কোর, লেনদেন সক্ষমতা এবং নিয়মিত আয়-ব্যয়ের প্রমাণ। এর পরই ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হবে এবং কার্ডের খরচের সীমা (Credit Limit) নির্ধারণ করা হবে।

কে ক্রেডিট কার্ড পাবেন?

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনুযায়ী, নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করলে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া সম্ভব:

  1. আয় বা সঞ্চয়: কার্ড পেতে হলে আয় থাকতে হবে বা আপনার নিজস্ব সঞ্চয় থাকতে হবে।
  2. চাকরিজীবী: মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা হলে ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে।
  3. ব্যবসায়ী: ব্যাংকে বছরে ১০ লাখ টাকার লেনদেন করলে কার্ড দেওয়া হয়।
  4. শিক্ষার্থী ও পরিবারনির্ভর গ্রাহক: শিক্ষার্থী ও অন্যান্য পরিবারনির্ভর ব্যক্তিরাও নির্দিষ্ট নিয়মে ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন।

এই নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সুবিধাজনক। কারণ, তাদের নিয়মিত করযোগ্য আয় না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার শুধু সহজ কেনাকাটা নয়, বরং অনেক ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করে।

  • অনলাইন ও অফলাইন লেনদেন সহজ হয়।
  • বড় লেনদেনের জন্য নগদ প্রয়োজন পড়ে না।
  • প্রতিমাসে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ পাওয়া যায়।
  • শিক্ষার্থী ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক স্বচ্ছতা ও লেনদেনের ইতিহাস তৈরি হয়।
  • বিমা, মাইলস ও বিভিন্ন রিওয়ার্ড পয়েন্ট সুবিধা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার অর্থনৈতিক সচেতনতা বাড়ায় এবং ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল লেনদেনকে আরও শক্তিশালী করে।

ক্রেডিট কার্ড বাজার ও ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের বাজার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল পেমেন্ট ও ই-কমার্সের বিস্তারের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার আরও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করযোগ্য না এমন শিক্ষার্থী ও যুবকদের জন্য এই নতুন নিয়ম তাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা এবং স্বাধীন লেনদেনের সুযোগ বাড়াবে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর জন্যও নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করার সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সহজীকরণ ঘটেছে। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা কমানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, যুবক ও অন্যান্য গ্রাহকরা সহজেই ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

প্রধান বিষয়গুলো:

  • আর্থিক প্রমাণপত্র (PSR) আর প্রয়োজন নেই।
  • TIN ধারীদের সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র যথেষ্ট।
  • শিক্ষার্থী ও করযোগ্য নন ব্যক্তিরাও সুবিধা পাবেন।
  • অনলাইন আবেদন ও সহজ ডেলিভারি ব্যবস্থা চালু।
  • ক্রেডিট স্কোর অনুযায়ী সীমা নির্ধারণ।

এই নতুন নিয়মের ফলে বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ড বাজার আরও বিকশিত হবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

MAH – 13243 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button