ডিমের দাম এখনো চড়া: রাজধানীতে ডজন ১৩০–১৪০ টাকা, সবজির বাজারও চাপে

রাজধানীর বাজারে ডিমের দাম তিন সপ্তাহ ধরে চড়া অবস্থানেই রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এখনো ফার্মের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ডিমের দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। এর পাশাপাশি কিছু সবজি ও মাছ-মাংসের দামও স্থিতিশীল থাকলেও বর্ষাকালের শুরুতে সরবরাহে বিঘ্নের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার এবং কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, তিন দিন আগে ডজনে ৫ টাকা কমলেও সামগ্রিকভাবে দাম এখনো আগের তুলনায় ১৫–২০ টাকা বেশি।
খুচরা বিক্রেতা আবদুল কাদের বলেন, “বৃষ্টি ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও কমার সম্ভাবনা এখনই নেই। ডিমের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদন তেমন বাড়েনি।”
ডিমের চাহিদা বাড়ার কারণ
বর্তমানে বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক বেশি, বিশেষ করে শীতকালীন মৌসুমের তুলনায়। ফলে ডিম এখন একটি সস্তা প্রোটিন উৎস হিসেবে বেশি চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। কিন্তু উৎপাদন না বাড়ায় সরবরাহের ওপর চাপ পড়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিল (BPICC)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, “বছরের এই সময়ে খামারিদের উৎপাদন কিছুটা কম থাকে। তাছাড়া খাদ্য ও বাচ্চা মুরগির দাম বাড়ার কারণে অনেক খামার উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে।”
মুরগির বাজারে কিছুটা স্বস্তি
ডিমের দাম বাড়লেও মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা কম। সোনালি মুরগির দামও ২০ টাকা কমে কেজিতে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকার মধ্যে ছিল।
একজন মুরগি বিক্রেতা জানান, “বৃষ্টির কারণে ক্রেতা কম, সে কারণে দাম কিছুটা কমেছে। তবে যদি সরবরাহে সমস্যা হয়, আবার দাম বাড়তে পারে।”
সবজির বাজারে মিশ্র অবস্থা
বেশির ভাগ সবজির দাম এখনও ১০০ টাকার নিচে থাকলেও কিছু কিছু পণ্যে অস্থিরতা রয়েছে। গতকাল যে দাম পাওয়া গেছে বাজারে:
- পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও লাউ: প্রতি কেজি ৪০–৬০ টাকা
- বরবটি, কাঁকরোল, বেগুন: প্রতি কেজি ৬০–৮০ টাকা
- টমেটো: প্রতি কেজি ৭০–৮০ টাকা
- পেঁপে: প্রতি কেজি ৫০–৬০ টাকা
বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে পরিবহন ও সরবরাহে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিপাত আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে বাজারে আরও কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
মাছ ও মাংসের বাজার স্থিতিশীল
মাছ ও মাংসের বাজারে আপাতত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারে মাছের দাম ছিল এমন:
- পাবদা: প্রতি কেজি ৪০০–৪৫০ টাকা
- তেলাপিয়া: ২০০–২২০ টাকা
- পাঙাশ: ১৮০–২০০ টাকা
- রুই: ৩০০–৩৫০ টাকা
- কই: ২৫০–২৮০ টাকা
গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০–৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১,০০০–১,১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চালের বাজারে স্বস্তি
বোরো মৌসুমে উৎপাদিত নতুন চাল বাজারে আসায় মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমেছে ও স্থিতিশীল রয়েছে। এখন খুচরা পর্যায়ে:
- মিনিকেট (রসিদ): ৭২ টাকা/কেজি
- ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর ব্র্যান্ড: ৭৫ টাকা/কেজি
- মোজাম্মেল মিনিকেট: ৮২ টাকা/কেজি
- নাজিরশাইল চাল: মানভেদে ৮০–৯৫ টাকা/কেজি
- ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯: ৫৮ টাকা/কেজি
- স্বর্ণা: ৫৫ টাকা/কেজি
গত মাসেও পুরাতন মিনিকেট চাল বিক্রি হতো ৮৫ টাকার ওপরে। নতুন চাল আসায় দাম কিছুটা কমে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি ফিরেছে।
অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম
- পেঁয়াজ: ৫০–৫৫ টাকা/কেজি
- আলু: ২০–২৫ টাকা/কেজি
- দেশি রসুন: ১২০–১৪০ টাকা/কেজি
- আমদানি করা রসুন: ২২০–২৪০ টাকা/কেজি
বিক্রেতারা জানান, রসুনের দাম কিছুটা বেশি রয়েছে, তবে এখনই এর বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
রাজধানীর বাজারে বর্তমানে ডিমের দাম বেশি থাকলেও চাল, মুরগি ও বেশিরভাগ সবজির দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে চলমান বৃষ্টিপাত ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে আবারও কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং প্রয়োজন হলে আমদানির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।