
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সেনাসদরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিল। বৈঠকে উভয়পক্ষই পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বিদ্যমান সহযোগিতার অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে সামরিক খাতে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন বিষয়ে উভয়পক্ষ ইতিবাচক মতামত প্রকাশ করে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা, আধুনিকীকরণ এবং শান্তিরক্ষী মিশনে অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই নিজেদেরকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
সামরিক সহযোগিতা ও প্রযুক্তি বিনিময়
বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও কাজ করছে। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইইউ প্রতিনিধিদল জানান, তারা বাংলাদেশে সামরিক প্রশিক্ষণ, আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে আগ্রহী। এ ছাড়া শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিতে তারা যৌথভাবে কাজ করতে চায়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী মিশনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ধরনের অবদানকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাণিজ্য, মানবাধিকার, শিক্ষা ও সামরিক প্রশিক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই সহযোগিতা চলছে। অতীতে বেশ কয়েক দফা ইইউ প্রতিনিধিদল ঢাকায় বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে। এবার সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকের প্রভাব
এই বৈঠকের মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতা নতুন মাত্রায় উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইইউ যদি সামরিক শিল্পে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়, তবে দেশের প্রতিরক্ষা খাত আরও আধুনিক ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যই ইইউকে আকৃষ্ট করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরনের বৈঠক কেবল প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সৌজন্য সাক্ষাৎকে কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা ভবিষ্যতে দুই পক্ষের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে। এখন দেখার বিষয়, আলোচনায় যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো, তা কত দ্রুত বাস্তবে রূপ নেয়।
এম আর এম – ১৩৮১,Signalbd.com