বানিজ্য

জাতীয় সংসদের জন্য ২৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

জাতীয় সংসদের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ সচিবালয় কমিশন। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের এক বৈঠকে এই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বাজেট শুধু সংসদ সচিবালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় নয়, বরং এর সঙ্গে ভবিষ্যৎ তিন অর্থবছরের একটি সুপরিকল্পিত বাজেট প্রক্ষেপণও অনুমোদন করা হয়েছে, যা সংসদীয় কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

বাজেটের মূল কাঠামো ও প্রক্ষেপণ

সংসদ সচিবালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় ও উন্নয়ন খাতে মোট ১৫৪ কোটি ৪ লাখ ৫ হাজার টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই বাজেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩২ কোটি টাকায়।

এ ছাড়া ২০২৬-২৭ অর্থবছরে বাজেট প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরের জন্য ২৫৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, আগামী তিন অর্থবছরে সংসদ সচিবালয়ের ব্যয়ক্রম ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে, যাতে করে সময়োপযোগী প্রযুক্তি, কাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও উন্নত করা যায়।

বৈঠকের নেতৃত্ব ও উপস্থিতির বিবরণ

এই গুরুত্বপূর্ণ বাজেট বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “সংসদ সচিবালয়ের স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সময়োপযোগী কাজ পরিচালনার জন্য এ ধরনের পরিকল্পিত বাজেট অপরিহার্য। বাজেটের প্রতিটি খাত যাতে সঠিকভাবে ব্যয় হয় তা নিশ্চিত করতে কমিশন যথেষ্ট সতর্ক।”

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন:

  • প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া
  • জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান
  • লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব হাফিজ আহমেদ চৌধুরী
  • অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার

এ সকল শীর্ষ পর্যায়ের আমলাদের উপস্থিতি এ বৈঠককে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।

বাজেটের ব্যয়ের মূল খাতসমূহ

সংসদ সচিবালয়ের বাজেট মূলত দুটি প্রধান খাতে বিভক্ত—পরিচালন ব্যয় এবং উন্নয়ন ব্যয়। পরিচালন ব্যয়ে রয়েছে—

  • সংসদ সদস্যদের সম্মানী ও ভাতা
  • স্টাফদের বেতন-ভাতা
  • সংসদীয় কমিটিসমূহের বৈঠক ও আনুষঙ্গিক খরচ
  • সংসদ অধিবেশনের আয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যয়

অন্যদিকে উন্নয়ন ব্যয়ে রয়েছে—

  • ডিজিটাল প্রযুক্তি সংযুক্তকরণ
  • সংসদ ভবনের সংস্কার ও আধুনিকায়ন
  • পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার প্রবর্তন
  • সংরক্ষিত নথি ও সংসদীয় রেকর্ড সংরক্ষণের নতুন পদ্ধতির উন্নয়ন

এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরি আধুনিকায়ন, সংসদ টিভির সম্প্রসারণ এবং ই-গভর্নেন্স কার্যক্রমে নতুন প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিও এই বাজেটের আওতায় আসছে।

বাজেট বাড়ার কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

প্রতিবছর সংসদ সচিবালয়ের কাজের পরিধি এবং প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে। সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম আরও সহজ ও স্বচ্ছ করতে প্রয়োজন উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত জনবল। সংসদ টিভির সম্প্রচার সক্ষমতা বাড়ানো, সংসদীয় আর্কাইভ ডিজিটালাইজেশন এবং ভবিষ্যতে জনগণের অংশগ্রহণমূলক সংসদ গঠনে আধুনিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

এই বাজেট বৃদ্ধিকে অনেকে দেখছেন একটি সুপরিকল্পিত সংসদ সচিবালয় গঠনের অংশ হিসেবে। জনসাধারণের করের টাকায় পরিচালিত সংসদ যাতে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং কার্যকর হয়, তারই প্রতিফলন এই বাজেট পরিকল্পনায়।

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

অর্থনীতি ও প্রশাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদ সচিবালয়ের বাজেট বৃদ্ধি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তবে এই অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং ফলাফলভিত্তিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসিমা জাহান বলেন, “সংসদ হলো দেশের নীতিনির্ধারণের কেন্দ্র। সেখানে যথাযথ পরিকাঠামো ও প্রযুক্তি থাকলে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে। তবে এ বাজেট যেন শুধুমাত্র খরচের খাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে জনসেবামূলক দিকেও প্রতিফলিত হয়, তা নজরে রাখতে হবে।”

সংসদ সচিবালয়ের আধুনিকায়নের পথে আরও এক ধাপ

বাজেটের মাধ্যমে সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উন্নত সংসদীয় গণতন্ত্র গঠনে একটি আধুনিক ও দক্ষ সচিবালয় অপরিহার্য।

অতীতেও দেখা গেছে সংসদ সচিবালয়ের কিছু উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এ বছর থেকে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য আলাদা নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাবও উঠে এসেছে।

উপসংহার

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সংসদ সচিবালয়ে ২৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে সংসদের কাজের গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে। ভবিষ্যতে এই বাজেট যেন দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button