২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভাগ্যে কী, লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থতা, উচ্চমাত্রার ঋণ খেলাপি ও আর্থিক অনিয়মের কারণে ২০টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা ব্যাখ্যা দিতে পারে কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না।
সংকটে থাকা ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ ব্যাংক যে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে, সেগুলো হলো:
- সিভিসি ফাইন্যান্স
- বে লিজিং
- ইসলামিক ফাইন্যান্স
- মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স
- জিএসপি ফাইন্যান্স
- হজ্জ ফাইন্যান্স
- ন্যাশনাল ফাইন্যান্স
- আইআইডিএফসি
- প্রিমিয়ার লিজিং
- প্রাইম ফাইন্যান্স
- উত্তরা ফাইন্যান্স
- আভিভা ফাইন্যান্স
- ফিনিক্স ফাইন্যান্স
- পিপলস লিজিং
- ফার্স্ট ফাইন্যান্স
- ইউনিয়ন ক্যাপিটাল
- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং
- বিআইএফসি
- ফারইস্ট ফাইন্যান্স
- এফএএস ফাইন্যান্স
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর ঋণ খেলাপির হার ৯০ শতাংশেরও বেশি, যা আর্থিক খাতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উদাহরণস্বরূপ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, পিপলস লিজিংয়ের ৯৭ শতাংশ, এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৯৬ শতাংশ।
পি কে হালদার কেলেঙ্কারির প্রভাব
এই সংকটের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারি। তিনি বিভিন্ন এনবিএফআই থেকে প্রায় ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এই অর্থ তিনি বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন। এই ঘটনায় পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স এবং বিআইএফসি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের জেলে আটক আছেন। বাংলাদেশে তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি আদালত তার এবং তার সহযোগীদের ২১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে।
গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি “ডিপোজিট প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫” খসড়া প্রকাশ করেছে। এই খসড়া অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক বা এনবিএফআই বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহক সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত পাবেন। এই সীমা প্রতি তিন বছর পর পর পর্যালোচনা করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিএফআইগুলোর পরিচালনা পর্ষদে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের নিয়ম পরিবর্তন করেছে। এখন থেকে স্বাধীন পরিচালকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্যানেল থেকে নিয়োগ পাবেন এবং তাদের দায়িত্ব হবে প্রতিষ্ঠানে কোনো অনিয়ম হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো।
যেসব গ্রাহক এনবিএফআইগুলিতে অর্থ জমা রেখেছেন, তাদের উচিত দ্রুত তাদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদি সম্ভব হয়, তাহলে নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকুন, যেমন সরকারি সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের স্থায়ী আমানত।
বাংলাদেশের আর্থিক খাত বর্তমানে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ এবং নতুন নীতিমালার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। তবে গ্রাহকদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।