অর্থনীতি

এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আরও সংকোচন করে নির্ধারণ করা হচ্ছে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। আগামীকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এই খসড়া এডিপির অনুমোদন চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বাস্তবায়ন সক্ষমতা ও আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তা পরবর্তীতে হ্রাস করে নতুন প্রস্তাবনায় আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে।

সভায় থাকছেন প্রধান উপদেষ্টা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে ব্রিফ করবেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির খসড়া উপস্থাপন করা হবে।

নতুন এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি উন্নয়ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এডিপির মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা তথা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কমছে বরাদ্দ

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ছে না। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ হ্রাসের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাখাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই খাতে বরাদ্দ হ্রাস সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়নের অগ্রাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

পরিবহন ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

এবারের খসড়া এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষাখাতে, বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।

এই তিনটি খাতের পর বরাদ্দের ক্রমানুসারে রয়েছে:

  • গৃহায়ণ খাত: ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা
  • স্বাস্থ্য খাত: ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা
  • স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন: ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা
  • কৃষি খাত: ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা
  • পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ: ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা
  • শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা: ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত: ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা

খাতভিত্তিক ব্যয়ের বিশ্লেষণ

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির চাপে কিছু খাতে বরাদ্দ কমানো ছাড়া বিকল্প ছিল না। তবুও সরকার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, বিদেশি সহায়তা নির্ভর প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকছে, যার কারণে ব্যয়ের কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানো দেশের দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নের জন্য হুমকি হতে পারে। দেশের টেকসই উন্নয়নে এই দুই খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন তারা।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপি এমন সময় অনুমোদিত হচ্ছে যখন দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হিমশিম খাওয়া এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে চাপ বৃদ্ধির কারণে সরকারকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে রাশ টানতে হচ্ছে। বাজেট ঘাটতির প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়লেও তা পূরণে সময় লাগছে।

তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবায়নক্ষমতা বিবেচনায় এনে এডিপি কমানো হয়েছে। প্রকল্পের গুণগত মান ও অর্থের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার আরও কঠোর হবে বলে জানা গেছে।

উপসংহার

২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপি কমিয়ে আনা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দিয়ে দেশের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আগামীকাল রোববার এনইসি সভায় এই খসড়া এডিপি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের পর বিস্তারিত দিকনির্দেশনা আসবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button