বানিজ্য

মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও স্বস্তি দিল মিনিকেট চাল, বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দেশের খাদ্যপণ্যের বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রবণতা। বিশেষ করে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যপণ্য যেমন ডিম ও মুরগির দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও মিনিকেট চালের দামে এসেছে স্বস্তিদায়ক পতন। রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা, সরবরাহ, উৎপাদন ব্যয় এবং মৌসুমী প্রভাব মিলিয়ে এই মূল্য পরিবর্তন ঘটছে।

ডিমের বাজারে আবারও উর্ধ্বগতি: ডজনে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার, এবং কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। অথচ এক মাস আগেও একই পরিমাণ ডিম বিক্রি হতো ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। অর্থাৎ ডজনে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

ডিমের দামের বাড়তির কারণ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকাল শেষ হওয়ার পর সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিকল্প প্রোটিন উৎস হিসেবে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। আর এই চাহিদা বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে পারেনি উৎপাদন, ফলে বাড়তি চাপ পড়ছে বাজারে।

ডিমের খুচরা বিক্রেতা মফিজ উদ্দিন জানান,

“এখন প্রতিদিনই মানুষ বেশি ডিম চাইছে। শীতকালে ডিমের বিক্রি কমে যায়, তখন দামও কমে। কিন্তু এখন ডিমের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, আর ফার্মগুলো উৎপাদন আগের মতো রাখতে পারছে না।”

মুরগির দামেও উর্ধ্বগতি: কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি

ডিমের পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। বর্তমানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই দাম ছিল যথাক্রমে ১৫৫-১৬৫ টাকা এবং ২৩৫-২৫৫ টাকা।

ফিডের দাম ও খামারির সংকটের প্রভাব

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সমিতির সদস্যদের মতে, মুরগির খাদ্য (ফিড) ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা মুরগি উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে সরবরাহ কমছে, কিন্তু চাহিদা একই থাকায় বাড়ছে দাম।

স্বস্তির খবর: মিনিকেট চালের দাম কমেছে

তবে একদিকে যখন ডিম ও মুরগির দাম বাড়ছে, তখন মিনিকেট চালের বাজারে এসেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। বোরো মৌসুমে নতুন চাল বাজারে আসার ফলে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা কমেছে।

বর্তমান বাজারদর:

  • ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল: ৭৫ টাকা/কেজি
  • রসিদ মিনিকেট চাল: ৭২ টাকা/কেজি
  • মোজাম্মেল ব্র্যান্ড: ৮২ টাকা/কেজি (আগে ছিল ৮৫+)

চালের পাইকারি বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন,

“নতুন বোরো চাল উঠছে, তাই দাম একটু একটু করে কমছে। জুন মাসের মধ্যে আরও কমার সম্ভাবনা আছে।”

অন্যান্য নিত্যপণ্যের অবস্থা কেমন?

পেঁয়াজ ও রসুন: দাম স্থিতিশীল

  • দেশি পেঁয়াজ: ৫৫-৬০ টাকা/কেজি (বাজারে ভেদে ৬০-৭০)
  • দেশি রসুন: ১২০-১৪০ টাকা
  • চায়না রসুন (আমদানি): ২২০-২৪০ টাকা

আলু: সস্তায় কিনতে পাচ্ছেন

  • আলু: ২০-২৫ টাকা/কেজি (একই ছিল গত সপ্তাহেও)

সবজি বাজারে মিশ্র চিত্র

গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কিছুটা স্থির আছে। তবে টমেটো ও পেঁপেতে কিছুটা দাম বেড়েছে।

সবজির বর্তমান দর (প্রতি কেজি):

  • পটোল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙে: ৪০-৬০ টাকা
  • বরবটি, পেঁপে, কাঁকরোল, বেগুন: ৬০-৮০ টাকা
  • লাউ ও ধুন্দল: ৫০-৬০ টাকা (আকারভেদে ভিন্ন)

মাছ ও মাংসের বাজার: এখনো চড়া

মাছ:

  • পাবদা: ৩৫০–৪৫০ টাকা
  • রুই: ৩৫০–৪০০ টাকা
  • পাঙাশ: ২০০–২৫০ টাকা
  • তেলাপিয়া: ২২০–২৪০ টাকা
  • কৈ: ২৫০–৩০০ টাকা

গরু ও খাসির মাংস:

  • গরুর মাংস: ৭০০–৮০০ টাকা
  • খাসির মাংস: ১,০০০–১,১৫০ টাকা

মাংস বিক্রেতাদের মতে, পশুখাদ্যের দাম এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মাংসের বাজারে স্বস্তি নেই।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

রাজধানীর টাউন হল বাজারে দেখা গেল, অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ক্রেতারা নিরুপায়ভাবে বাজার করছেন। বেসরকারি চাকরিজীবী শাহিনুর রহমান বললেন,

“চাল কিছুটা সস্তা হলেও ডিম-মুরগি, মাছ-মাংস, সবজির দাম একেবারে নাগালের বাইরে। এক সপ্তাহের বাজার করতেই হাজার টাকার বেশি চলে যায়।”

বিশ্লেষকদের পরামর্শ

বাজার বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন,
সরবরাহ চেইনের উন্নয়ন, মধ্যস্বত্বভোগী নিয়ন্ত্রণ, এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সরকারকেও দ্রুত হস্তক্ষেপ করে খামারিদের উৎসাহিত করতে হবে, নতুবা মূল্যস্ফীতির বোঝা সাধারণ জনগণের ওপর আরও বাড়বে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button