ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু কাল

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের জন্য একটি বড় সুখবর নিয়ে এসেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সরকার পরিচালিত এই সংস্থা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) থেকে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। চলবে ৩ জুন পর্যন্ত।
এই উদ্যোগে এবার প্রথমবারের মতো ফ্যামিলি কার্ড ছাড়াও সাধারণ ভোক্তারা টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন। যদিও ফ্যামিলি কার্ডধারীদের তুলনায় সাধারণ ভোক্তাদের জন্য পণ্যের মূল্য কিছুটা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, তবুও বাজারমূল্যের তুলনায় তা যথেষ্ট সাশ্রয়ী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
সারাদেশে ৬৯০টি ট্রাকে বিক্রি কার্যক্রম
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে টিসিবির এই বিশেষ বিক্রয় কার্যক্রমের আওতায় প্রতিদিন সারা দেশে ৬৯০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা মহানগরে থাকবে ৫০টি ট্রাক, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ২০টি এবং বাকি ছয়টি বিভাগীয় শহরে ১০টি করে ট্রাক। এছাড়াও দেশের ৫৬টি জেলা শহরেও ১০টি করে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হবে।
বুধবার (২১ মে) বিকেলে টিসিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতেও ট্রাক সেল কার্যক্রম চালু থাকবে, যাতে ঈদের আগে সব শ্রেণির জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন।
পণ্যের তালিকা ও মূল্য নির্ধারণ
এই বিশেষ বিক্রয় কার্যক্রমের আওতায় একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ লিটার ভোজ্যতেল, ২ কেজি মসুর ডাল এবং ১ কেজি চিনি কিনতে পারবেন।
পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে নিম্নরূপ:
- ভোজ্যতেল: প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা
- মসুর ডাল: প্রতি কেজি ৮০ টাকা
- চিনি: প্রতি কেজি ৮৫ টাকা
ফ্যামিলি কার্ডধারীদের জন্য একই পণ্যগুলোর মূল্য তুলনামূলকভাবে কম:
- ভোজ্যতেল ১০০ টাকা,
- মসুর ডাল ৬০ টাকা,
- চিনি ৭০ টাকা।
এ বিষয়ে টিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে ঈদুল আজহার আগে দেশের সকল মানুষ ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য কিনতে পারেন। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণেও আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।”
ঈদের আগে সাধারণ জনগণের পাশে টিসিবি
টিসিবির এই উদ্যোগ মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ন্যায্য দামে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের মূল্যবৃদ্ধি অনেক পরিবারকেই সংকটে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি এই পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ এনে দিয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য।
উল্লেখ্য, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীদের জন্য সারা বছরই ভর্তুকিমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এই কার্ড সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে দেওয়া হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে সকল শ্রেণির মানুষ যেন এই সুবিধা পায়, সেই লক্ষ্যেই ট্রাক বিক্রয়ের মাধ্যমে খোলা বাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ভোক্তাদের অভিমত
টিসিবির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভোক্তারা। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বসবাসকারী গৃহিণী শাহানা বেগম বলেন, “বাজারে ডাল আর চিনি কিনতেই হাজার টাকা খরচ হয়। টিসিবির ট্রাক থেকে যদি সাশ্রয়ে পাওয়া যায়, তাহলে অনেকটাই সুবিধা হবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।”
একই মত পোষণ করেন রিকশাচালক রহিম মিয়া। তিনি বলেন, “আমার ফ্যামিলি কার্ড নেই। কিন্তু এইবার ট্রাক থেকে কিনতে পারব জেনে খুব ভালো লাগছে।”
পণ্যের যোগান ও মান বজায় রাখার বিষয়ে টিসিবির আশ্বাস
টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে এবং সরবরাহও নিয়মিত চলছে। কোনো ধরনের সংকট যাতে না হয়, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় ট্রাক বিক্রয় কার্যক্রম তদারকি করা হবে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ভোক্তাদের মধ্যে যাতে ভিড় বা বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য নির্ধারিত সময়সূচি ও স্থান অনুযায়ী ট্রাকগুলো অবস্থান করবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে।
টিসিবির অতীত উদ্যোগ ও কার্যক্রম
টিসিবি দীর্ঘদিন ধরে সাশ্রয়ী দামে ভোক্তাদের মাঝে পণ্য সরবরাহ করে আসছে। করোনা মহামারির সময় ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী বৈশ্বিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সময়েও টিসিবির কার্যক্রম দেশের নিম্নবিত্ত মানুষের সহায়ক ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে টিসিবি দেশের এক কোটি ২৫ লাখ ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারকে নিয়মিতভাবে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য সরবরাহ করে আসছে। ঈদ উপলক্ষে এই উদ্যোগ সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে, পাশাপাশি নতুনভাবে সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশংসিত হয়েছে।
উপসংহার
ঈদুল আজহা সামনে রেখে টিসিবির এই বিশেষ ট্রাক বিক্রয় কার্যক্রম নিঃসন্দেহে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্যের চাপের মধ্যে এমন সরকারি উদ্যোগ দেশের জনগণের জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে আনে। এ ধরনের সময়োপযোগী কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।