চার সপ্তাহের ঊর্ধ্বগতি থেমে গেল: বিশ্ববাজারে ডলারের মান কমেছে

টানা চার সপ্তাহের শক্তিমত্তার পর বিশ্ববাজারে অবশেষে ডলারের ঊর্ধ্বগতি থেমে গেছে। এশিয়ার বাজারে আজ সোমবার (১৯ মে) সকালের লেনদেন শুরু হতেই দেখা গেছে ডলারের বিপরীতে বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন সরকারের ঋণমান কমে যাওয়ার প্রভাব ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান হ্রাস: ডলারের ওপর চাপ
গত শুক্রবার (১৭ মে) আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে দিয়েছে। দেশটির মোট জাতীয় ঋণ বর্তমানে ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা মার্কিন ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
এর আগে ফিচ ও এসঅ্যান্ডপি-ও (Standard & Poor’s) একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান হ্রাস করেছিল। এসব পদক্ষেপ বাজারে আস্থার ঘাটতি তৈরি করছে।
এ বিষয়ে মুডিস সতর্ক করে বলেছে, ঋণের এই চাপে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমেছে
আজ সকালের এশিয়ান লেনদেনে দেখা গেছে:
- জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান কমেছে ০.৩%। এখন প্রতি ডলার পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫.২২ ইয়েনে।
- সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলার কমেছে ০.২%।
- ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান কমে ইউরোর দাম বেড়েছে ০.২%, এখন প্রতি ইউরো ১.১১ ডলার।
- ব্রিটিশ পাউন্ড বেড়েছে ০.১%, বর্তমানে ১.৩২ ডলার।
- নিউজিল্যান্ডের কিউই ডলার বেড়েছে ০.১%, এখন মান দাঁড়িয়েছে ৫৯ সেন্ট।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলীয় ডলার টানা তিনদিন পতনের পর আজ সামান্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং বেড়েছে ০.১%। আগামীকাল মঙ্গলবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ০.২৫% কমাতে পারে, যা বর্তমানে ৪.১০%।
বাজার বিশ্লেষকরা যা বলছেন
অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা গবেষণা বিভাগের প্রধান মাহজাবীন জামান বলেন,
“মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগ এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অস্থিরতা ডলারের নিরাপদ আশ্রয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন ইউরো, ইয়েন ও সোনার মতো বিকল্প আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেছে।”
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও ঝুঁকি
রবিবার দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন,
“যেসব বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সদিচ্ছার ভিত্তিতে আলোচনায় বসছে না, তাদের পণ্যে আগের পাল্টা শুল্কই চূড়ান্তভাবে কার্যকর হতে পারে।”
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাইকারি করছাড় বিল নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও চাপ বাড়িয়েছে। তাঁর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী এক দশকে জাতীয় ঋণ আরও ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মহলে ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, ডলারের ওপর নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
ডলারের চার সপ্তাহব্যাপী শক্তিশালী অবস্থানের পর এবার বিশ্ববাজারে তার গতি থেমে গেছে। ঋণমান হ্রাস, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কৌশল—সব মিলিয়ে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছে অন্যান্য মুদ্রা যেমন ইউরো, ইয়েন ও কিউই ডলার।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের এখন নজর আগামী কয়েক সপ্তাহের মার্কিন অর্থনৈতিক নীতিমালার দিকে—যা নির্ধারণ করবে ডলারের ভবিষ্যৎ গতি।