বানিজ্য

সোনার দামে বড় পতন, ভরিতে কমল ৩,৪৫২ টাকা

দেশের বাজারে সোনার দামে বড় ধরনের পতন হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে নতুন করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এই দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪৫২ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। ফলে, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকায়। সোনার এই নতুন দাম আগামীকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে, গত ২৩ এপ্রিল দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই সময় ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকায় পৌঁছেছিল, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সোনার দাম ছিল। এরপর গত ১৩ মে আবারও সোনার দাম বৃদ্ধি পায়। ওই সময় ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৬ টাকায়। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে সোনার দামে এই বড় ধরনের পতন ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

বাজুসের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল ১৬ মে ২০২৫ থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ টাকায় বিক্রি হবে। এছাড়াও, সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৩ টাকায়।

আজ ১৫ মে ২০২৫ পর্যন্ত বাজারে প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৬ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নতুন দাম কার্যকর হওয়ার ফলে, ২২ ক্যারেট সোনার ভরিতে ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, ২১ ক্যারেটে ৩ হাজার ৩০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ৮২২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরিতে ২ হাজার ৪০২ টাকা দাম কমেছে।

এদিকে, রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বাজুস জানিয়েছে, রুপার আগের দামই বহাল থাকবে। ফলে, ২২ ক্যারেটের ১ ভরি রুপা ২ হাজার ৮১১ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ১ হাজার ৭২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানিয়েছে যে, সোনা ও রুপার বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও সমিতির নির্ধারিত ৬ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি যোগ করতে হবে। গয়নার নকশা ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে। ক্রেতাদের সোনার অলংকার কেনার সময় এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সোনার দাম কমার কারণ হিসেবে বাজুস বিশ্ববাজারে তেজাবি সোনার দাম হ্রাসকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ওঠানামার প্রভাবেই মূলত দেশের বাজারে সোনার দামে পরিবর্তন আসে। বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামে অস্থিরতা দেখা যায় এবং এর প্রভাব স্থানীয় বাজারেও পড়ে।

উল্লেখ্য, সোনার দাম এর আগে বেশ কয়েকবার ওঠানামা করেছে। গত কয়েক মাসে সোনার দাম যেভাবে বেড়েছিল, তাতে সাধারণ ক্রেতারা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সোনার অলংকার কেনা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, এই দাম কমার ফলে অনেকের কাছেই হয়তো সোনা কেনা কিছুটা সহজ হবে।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দাম কমার এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাজারে সোনার বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ, উচ্চ দামের কারণে অনেকেই এতদিন ধরে সোনা কেনা থেকে বিরত ছিলেন। এখন দাম কিছুটা কমায় তারা হয়তো আবার আগ্রহ দেখাতে পারেন।

তবে, সোনার বাজার সবসময়ই পরিবর্তনশীল। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দাম আবারও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাই, ক্রেতাদের উচিত বাজার পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া।

বাজুস নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের সোনার দাম পর্যবেক্ষণ করে এবং সেই অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে দাম সমন্বয় করে থাকে। এই দাম সমন্বয়ের ফলে একদিকে যেমন ক্রেতারা উপকৃত হন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও একটি স্থিতিশীল বাজার আশা করেন।

সোনার দাম কমার এই সংবাদে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যারা সম্প্রতি বেশি দামে সোনা কিনেছেন, তারা হয়তো কিছুটা হতাশ হবেন। তবে, যারা নতুন করে সোনা কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।

বর্তমানে ঈদ এবং অন্যান্য উৎসবের মৌসুম চলছে। এই সময়ে সোনার চাহিদা সাধারণত বৃদ্ধি পায়। দাম কমার এই সিদ্ধান্ত উৎসবের বাজারে সোনার বিক্রি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সরকার এবং বাজুস উভয়েই চেষ্টা করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা অনেক সময় স্থানীয় বাজারে প্রভাব ফেলে। তাই, সোনার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।

বাজুস একটি দায়িত্বশীল বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে সবসময় চেষ্টা করে ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করতে এবং বাজারের একটি সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে। সোনার দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত সেই প্রচেষ্টারই অংশ।

পরিশেষে বলা যায়, দেশের বাজারে সোনার দামে এই তাৎপর্যপূর্ণ পতন ক্রেতাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে, বাজারের গতিবিধি এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button