
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এই বৈঠকটি ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নের দিকে একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলাস্কার বৃহত্তম শহর অ্যাঙ্করেজে শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি সাম্প্রতিক বছরের অন্যতম আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঐতিহাসিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব
আলাস্কা একসময় রাশিয়ার অংশ ছিল, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়। ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আলাস্কাকে ক্রয় করেছিল সাত দশমিক দুই মিলিয়ন ডলারে, যা তখনকার দিনে বিরোধের জন্ম দিয়েছিল। বর্তমানে আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
আলাস্কার অবস্থানও বৈঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পশ্চিমে রাশিয়ার কাছাকাছি এবং বেরিং প্রণালী দ্বারা পৃথক হওয়া এই রাজ্য দুই দেশের জন্য সহজ ও নিরাপদ বৈঠকের স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অ্যাঙ্করেজ শহরটি শুধু বাণিজ্যিক নয়, সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকের উদ্দেশ্য ও আলোচ্যসূচি
এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান জানতে চাইবেন এবং সম্ভাব্য শান্তি প্রক্রিয়ার রূপরেখা নির্ধারণের চেষ্টা করবেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকোভ উল্লেখ করেছেন যে, আলাস্কার অবস্থান রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের জন্যও যৌক্তিক, কারণ তারা সহজে বেরিং প্রণালী দিয়ে আসতে পারবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি নিরাপদ ও কার্যকরভাবে আয়োজন করা যাবে।
আলাস্কার প্রাকৃতিক ও সামরিক গুরুত্ব
আলাস্কার বিশাল ভূখণ্ডে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস, সোনা এবং নদী ও লেক সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামরিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাঙ্করেজের লেক হুড সিপ্লেন ঘাঁটি এবং এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন যৌথ ঘাঁটি দুই দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকটি এই ঘাঁটিতেই অনুষ্ঠিত হবে, যা আর্কটিক সামরিক প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
এই বৈঠককে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আলাস্কার এই বৈঠক ট্রাম্পের জন্য একটি লিসেনিং এক্সারসাইজের মতো হবে, যেখানে তিনি রাশিয়ার অবস্থান ও ভাবনাগুলো ভালোভাবে জানতে পারবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতিমধ্যেই জানিয়েছিলেন, কিয়েভের অংশগ্রহণ ছাড়া যে কোনো চুক্তি কার্যকর হবে না। এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলাস্কার এই বৈঠক যদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
রাশিয়া ও আলাস্কার সম্পর্কের ইতিহাস ১৭০০ সালের গোড়াপ্রান্ত। সাইবেরিয়ার আদিবাসীরা প্রথমবারের মতো পূর্বে বিশাল ভূখণ্ডের কথা জানিয়েছিল। পরবর্তীতে নাবিক ভাইটাস বেরিং ১৭৪১ সালে সফল অভিযানের মাধ্যমে আলাস্কার উপকূলে মানুষ পাঠান। ১৮৬৭ সালে আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়। এর পর থেকেই এই ভূখণ্ডে প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বৈঠকের ভবিষ্যৎ ও প্রভাব
যদি বৈঠক সফল হয়, তাহলে এটি কেবল দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে দৃঢ় করবে না, বরং ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, বৈঠকের ফলাফল অনেকাংশে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের উপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ০৮৭২, Signalbd.com