বানিজ্য

ইউরোপ-আমেরিকায় ডেনিম রফতানিতে শীর্ষ অবস্থানেই বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির একটি কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম। এবারের এক্সপোর মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন’। গত আসরে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে আলোচনায় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজনে দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং প্রস্তুতির বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২৯ এবং তার পরবর্তী সময়ের জন্য শিল্পকে প্রস্তুত করা। এই এক্সপো আমাদের সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনে ‘ওয়াশিং প্রক্রিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশি ডেনিম ট্রেসেবিলিটি’র ওপর একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এই আলোচনাগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের স্থায়িত্ব, গুণগত মান এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে মতামত বিনিময় করবেন।

প্যানেল আলোচনায় বিশিষ্ট বক্তারা

প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুস সামাদ, পরিচালক, ওয়েল অফ ওয়াশিং; আরিফ লাভু, সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, রুহরোজ আরবিটি লিমিটেড; জুলি ডেভিস, জিএম – প্রসেসিং ইনোভেশন ও এডুকেশন এক্সটেনশন, দ্য উলমার্ক কোম্পানি; কামাল উদ্দিন মিয়া, সিওও (ওয়াশিং), বিটপি গ্রুপ; মারকো ভলপি, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিক্রয় প্রধান, ব্লুসাইন টেকনোলজিস এজি; মো. ফরহাদ হোসেন, স্বত্বাধিকারী, পিওর কেমিক্যালস; রাকিব ইমতিয়াজ, বিজনেস ম্যানেজার, এলসি ওয়াইকিকি; রেজা-ই-রাব্বি, প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা, ভার্টেক্স ওয়্যার লিমিটেড এবং সোহেল রানা, সিইও, ডিজাইনার ফ্যাশন লিমিটেড ও ডিজাইনার ওয়াশ লিমিটেড। এই বক্তারা তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার আলোকে ডেনিম শিল্পের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করবেন।

ডেনিম শিল্পের ঐতিহাসিক পথচলা

বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পথচলা। ১৯৮৯ সালে হংকং ও ফিলিপিন্সের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথম ডেনিম পোশাক তৈরির কারখানা স্থাপন করে। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১তম ডেনিম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে ১৭ কোটি পিসের বেশি ডেনিম পোশাক বিক্রি করে প্রায় ৯৪ কোটি ডলার আয় করে, যা চীনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে ডেনিম রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এলডিসি উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোর ঝুঁকি, বৈশ্বিক বাজারে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা এবং টেকসই উৎপাদন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা এই শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, সরকার এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরির উদ্যোগ বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর মতো আয়োজন শিল্পের এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি শুধু বাংলাদেশের ডেনিম পণ্যের প্রদর্শনীই নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতা, উদ্যোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম।

উপসংহার

বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প বিশ্ববাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে অর্জিত প্রবৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর মতো আয়োজন এই শিল্পের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। তবে, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং স্থায়িত্বের ওপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং দেশের শিল্প খাতের গুণগত মান এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button