এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন এমডি ড. তৌহিদুল আলম খান

এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন দেশের প্রখ্যাত ব্যাংকার ও টেকসই অর্থনীতিবিদ ড. মো. তৌহিদুল আলম খান। সোমবার (৬ মে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের ব্যাংকিং খাতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়কারী এই পেশাদার ব্যাংকার ইতোমধ্যে নিজস্ব দক্ষতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
বহুমাত্রিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা
ড. খান সর্বশেষ ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে ১৯৯৩ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। পেশাদারিত্ব ও নেতৃত্বগুণে তিনি শিগগিরই ব্যাংকিং খাতে নিজের অবস্থান সুসংহত করেন।
তাঁর ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো, প্রাইম ব্যাংকে ‘সিন্ডিকেশনস অ্যান্ড স্ট্রাকচার্ড ফাইন্যান্স’ বিভাগের নেতৃত্বদান। এ বিভাগের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিন্ডিকেশন ফাইন্যান্সিং চর্চা চালু এবং প্রসারিত করেন। ফলস্বরূপ, দেশীয় আর্থিক খাতের অগ্রগতিতে একটি সুগঠিত কাঠামো গড়ে ওঠে, যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্যায়িত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ পদে সফল দায়িত্ব পালন
প্রাইম ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ায় তিনি প্রধান ব্যবসায়িক কর্মকর্তা (CBO), প্রধান ঋণ ঝুঁকি কর্মকর্তা (CRO), এবং প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও পরিপালন কর্মকর্তা (CAMELCO) হিসেবেও কাজ করেছেন। এসব দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তিনি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এবং আর্থিক সুশাসন নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত স্বীকৃতি
ড. তৌহিদুল আলম খান একজন নটরডেমিয়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (ICMAB) একজন ফেলো সদস্য। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল ‘জিআরআই’ ভিত্তিক টেকসই ঋণ ঝুঁকি বিশ্লেষণ, যা ভিত্তি করে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রথম ‘সার্টিফাইড সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং অ্যাসিউরার (CSRA)’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, অর্থনীতির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন, কর্পোরেট রিপোর্টিং এবং পরিবেশ-সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়েও তিনি সমানভাবে অভিজ্ঞ।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত
ড. খান শুধুমাত্র ব্যাংকিং বা কর্পোরেট খাতেই নয়, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রেও নানান পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাঁর গবেষণালব্ধ তথ্য ও বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
বিশেষত ব্যাংকিং খাতে টেকসই উন্নয়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলোর ওপর তাঁর বিশ্লেষণ ও প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে করে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে পরিচিত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও তুলে ধরেছেন।
এনআরবিসি ব্যাংকের অগ্রগতির সম্ভাবনা
ড. তৌহিদুল আলম খানের মতো অভিজ্ঞ, পেশাদার এবং গবেষণাধর্মী ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি নতুন দিগন্তে যাত্রা শুরু করবে বলে মনে করছেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এবং কর্মকর্তারা।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা জানিয়েছেন, “ড. খান শুধুমাত্র একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার নন, বরং তিনি একজন দূরদর্শী নেতৃত্বের অধিকারী যিনি পরিবর্তন ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম। তাঁর নেতৃত্বে এনআরবিসি ব্যাংক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আমরা আশাবাদী।”
ভবিষ্যত কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গি
ড. খান এনআরবিসি ব্যাংকে যোগদানের পরপরই একটি কৌশলগত রূপকল্প উপস্থাপন করেন, যার মাধ্যমে ব্যাংকের টেকসই প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, গ্রাহক-কেন্দ্রিক পণ্য এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তিনি ব্যাংকের গ্রাহকসেবার উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (SME) ঋণ সম্প্রসারণ, ডিজিটাল ব্যাংকিংকে আরও সহজ ও নিরাপদ করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথা বলেছেন।
শেষ কথা
ব্যাংকিং খাতের একজন নিবেদিতপ্রাণ, গবেষক এবং দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নেতা হিসেবে ড. মো. তৌহিদুল আলম খানের পদচারণা নতুন প্রজন্মের ব্যাংকারদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এনআরবিসি ব্যাংকে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানটিকে কেবল আর্থিকভাবে সমৃদ্ধই নয়, বরং সামাজিক ও টেকসই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত একটি আধুনিক ব্যাংকে রূপান্তর করবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।