বানিজ্য

এপ্রিলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় ২.৩৯ বিলিয়ন ডলার

ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি এবং শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহে সমস্যার মধ্যেও এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় এসেছে ২.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ০.৪৪ শতাংশ বেশি। তবে, এই আয়ের মধ্যে ওভেন পোশাক খাতের তুলনায় নিট পোশাক খাত তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিট পোশাক খাতে আয় বেড়েছে ৫ শতাংশ, যেখানে ওভেন পোশাক খাত তুলনামূলকভাবে দুর্বল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবcomprehensive-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এই সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩২.৬৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ২৯.৩৮ বিলিয়ন ডলার। এই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের সমান পর্যায়ে থেকে গেছে, যা শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, ঈদের ছুটি, গ্যাস সমস্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক নীতির প্রভাবের কারণে।

ঈদের ছুটি ও গ্যাস সমস্যার প্রভাব

এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতরের কারণে দীর্ঘ ছুটি ছিল, যা শিল্পকারখানার কার্যদিবস কমিয়ে দিয়েছে। ফলে উৎপাদন এবং রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া, গ্যাস সরবরাহে প্রকট সমস্যা উৎপাদন ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। নিট তৈরি পোশাক ও প্রস্তুতকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সিগন্যালবিডিকে বলেন, “গত মাসে গ্যাসের সমস্যা খুবই তীব্র ছিল, যা উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, দীর্ঘ ছুটির কারণে কার্যদিবস কম ছিল, ফলে রপ্তানি আয় কিছুটা কমেছে।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সম্ভাব্য বাড়তি শুল্কের ঘোষণা, যদিও তা এখন স্থগিত, রপ্তানি বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।” যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘোষণা বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

খাতভিত্তিক পারফরম্যান্স

ইপিবি’র তথ্য অনুসারে, নিট পোশাক খাত এপ্রিলে তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে। এই খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫ শতাংশ, যা খাতটির শক্তিশালী অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, ওভেন পোশাক খাত তুলনামূলকভাবে দুর্বল ফলাফল দেখিয়েছে। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “ঈদের দীর্ঘ ছুটি এপ্রিলে রপ্তানি বৃদ্ধির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, মে মাসে যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে বোঝা যাবে এই স্থবিরতা ঈদের কারণে, নাকি শুল্ক নীতির প্রভাবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মোট রপ্তানি আয়ের দিক থেকে খুব বেশি তারতম্য নেই। গত মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৮ শতাংশ, আর এপ্রিলে তা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি তেমন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নয়।”

অর্থবছরের সামগ্রিক চিত্র

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইপিবি’র তথ্য অনুসারে, জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই খাতে রপ্তানি হয়েছে ৩২.৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শক্তিশালী অবস্থান এবং বিশ্ব বাজারে এর চাহিদার প্রমাণ বহন করে। তবে, এপ্রিলের তুলনামূলক স্থবিরতা শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এই খাত দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশের জন্য দায়ী। তবে, গ্যাস সরবরাহের অনিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ সংকট, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক সংক্রান্ত নীতিগত অনিশ্চয়তা এই খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, ঈদের মতো দীর্ঘ ছুটি উৎপাদন এবং রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা কমানো গেলে, তৈরি পোশাক খাত আরও ভালো করতে পারে।” তিনি আরও জানান, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা এখনও শক্তিশালী, এবং সঠিক নীতি ও সহায়তা থাকলে এই খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মে মাসে পরিস্থিতি উন্নত হবে। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “যদি মে মাসে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন না হয়, তাহলে রপ্তানি আয় আবারও ঊর্ধ্বমুখী হবে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের গুণগত মান এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বজায় রাখতে সহায়তা করছে।”

এছাড়া, শিল্প সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিল্পের জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, সঠিক নীতিগত সহায়তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

উপসংহার

এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে সামান্য প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, ঈদের ছুটি এবং গ্যাস সমস্যার কারণে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জিত হয়নি। তবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এই খাতের শক্তিশালী অবস্থানের প্রমাণ। শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী যে, সঠিক নীতিগত সহায়তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এই খাত আগামী দিনে আরও ভালো ফলাফল অর্জন করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button