আসামি ধরতে তৌহিদী জনতার ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ‘মসজিদের খতিব হত্যা ইসলামী নেতৃত্বকে শূন্য করার চক্রান্ত’

একটি মূল্যবান ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে নিরস্ত্রভাবে হত্যার ঘটনায় ভোলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় তৌহিদী জনতা ও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন নিহত খতিবের দ্রুত বিচার ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার দাবি করে জেলা প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জেলা ব্লকেড সহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘটনা
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ভোলার সদর উপজেলার নিজের বসতঘরে মাওলানা আমিনুল হক নোমানী (৪৫) নামে জামে মসজিদের খতিব ও মাদরাসা শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা রক্তমাখা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়ায় এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানাজার সময় অংশগ্রহণ করেন।
ভোলার কৃতি আলেম ও মাদরাসা অনুষদের শিক্ষক হিসেবে বহু বছর কর্মরত আমিনুল হক নোমানী স্থানীয়ভাবে সুপরিচিত ছিলেন। পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, হামলার সময় তার স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়িতে ছিলেন না, তাই বাসা ফাঁকা ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং তদন্ত শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
নিহত খতিব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
নিহত মাওলানা নোমানী ২০০৮ সাল থেকে জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস এবং স্থানীয় ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের জেলা সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। জানাজার দিন হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন এবং বক্তব্য রাখতে গিয়ে বক্তারা নিহতের স্মৃতিচারণে কাঁদেন।
স্থানীয় লোকজন ও ধর্মীয় নেতারা এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছে। তারা বলেন, “মসজিদের খতিবকে নৃশংসভাবে হত্যায় উদ্দেশ্য হলো ইসলামী নেতৃত্বকে দুর্বল করা; এটি কোনও সাধারণ বেআইনি কাজ নয়, বরং কন্ত্রব্য।” এই মর্মে হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
তৌহিদী জনতার দাবি ও ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
জানাজার পূর্বেই গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম সমাবেশে বললেন, হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছিল; সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না হওয়ায় তারা এখন প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। আল্টিমেটামের মেয়াদ শেষে যদি অভিযুক্তদের আইনের আওতায় না আনা হয়, তবে জেলা ব্লকেডসহ আরও কঠোর সমাবেশ-সমাবেশের হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়।
তৌহিদী জনতা সংবাদ সম্মেলনে আরও জানিয়েছে, সোমবার তারা জেলাব্যাপী স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ রাখবে, দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দাখিল করবে এবং শোক র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে আল্লাহর রহমত এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহাদাত মো. হাচনাইন পারভেজ বলেন, ঘটনাটি জানার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেছে। ডিবি ও অন্যান্য একাধিক টিম কাজ করছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলে তিনি জানান। পুলিশ ব্যবস্থা করা না হলে আইনগত প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-শাসকদের কড়া নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব
একাদশ এবং পরবর্তী নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড স্থিতিশীলতার জন্য নেতিবাচক সংকেত তৈরি করতে পারে। ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা স্থানীয় সামাজিক বন্ধনকে ভাঙতে পারে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক উত্তেজনা ত্বরান্বিত হতে পারে। বিশেষভাবে মসজিদের খতিবদের মতো জনগণের আস্থা-ভিত্তিক নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ সমাজে ভয় সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুত, স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত না হলে প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের সংলাপ ও সহনশীলতায় কাজ করলে উত্তেজনা কিছুটা কমানো সম্ভব।
ভোলায় মাওলানা আমিনুল হক নোমানীর নির্মম হত্যাকাণ্ড স্থানীয়ভাবে বড় ধাক্কা দিয়েছে। তৌহিদী জনতার ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ও গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারে কি না—তার ওপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ শান্তি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা।
এম আর এম – ১২২৩,Signalbd.com