বানিজ্য

বন্দরে একে অপরের জাহাজ নিষিদ্ধ, উত্তেজনা আরও বাড়ছে

ভারত ও পাকিস্তান মধ্যে চলমান উত্তেজনা এখন নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। কাশ্মীর ইস্যু এবং সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠায়, দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের পতাকাবাহী জাহাজ নিষিদ্ধ করেছে তাদের বন্দরে প্রবেশের জন্য। এর মাধ্যমে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হলো। গত শনিবার ভারতের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, পাকিস্তানের পতাকাবাহী জাহাজকে ভারতের বন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং পাকিস্তানও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ভারতের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা

ভারতের জাহাজ চলাচলবিষয়ক মহাপরিচালক গত শনিবার একটি বিবৃতিতে জানান, “পাকিস্তানের পতাকাবাহী জাহাজ ভারতীয় বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং ভারতের পতাকাবাহী জাহাজও পাকিস্তানের বন্দরে প্রবেশ করবে না।” এই পদক্ষেপের পিছনে ভারতের মূল কারণ হিসেবে জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশের কার্গো ও অবকাঠামোর সুরক্ষা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ

এদিকে, পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তাদের বন্দর ও জাহাজ চলাচল বিভাগের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজদের পাকিস্তানি বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্তের ব্যতিক্রম শুধু “কেস-টু-কেস” ভিত্তিতে নেওয়া হবে, যা শর্তসাপেক্ষ এবং বিশেষ পরিদর্শনের মাধ্যমে কার্যকর হবে।

কাশ্মীর হামলা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীর অঞ্চলের পেহেলগামে এক বন্দুকধারী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে, যদিও পাকিস্তান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা নতুন মাত্রা ধারণ করেছে এবং দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর এর প্রভাব পড়েছে।

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা: নতুন উত্তেজনা

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গত শনিবার তাদের স্বল্পপাল্লার আবদালি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে পরীক্ষা চালিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তান দাবি করেছে, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল সেনাদের আভিযানিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলো যাচাই করা।

ভারতের নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আসা সব ধরনের পণ্য আমদানি এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। একই সঙ্গে ভারত পাকিস্তান থেকে আকাশ এবং স্থলপথে সব ধরনের ডাক ও পার্সেলও নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য সম্পর্ক আরো সীমিত হয়ে যাবে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা সৃষ্টি হবে।

ভবিষ্যতের শঙ্কা

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এই নতুন অঙ্কটি শুধুমাত্র সামরিক এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দুই দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসার ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাগুলোর ফলে দু’দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ কার্যক্রমে ধীরগতি আসতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের জনগণের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামরিক উত্তেজনা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের এই নতুন সংকট শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। যদিও উভয় দেশই যুদ্ধের পথে যেতে চায় না, তবে সামরিক বাহিনী এবং সরকারগুলো যেভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে নতুন উত্তেজনা বাড়তে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button