ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা ১৫ দিনে নামিয়ে আনার সুপারিশ

দেশে ইলিশ মাছ শিকারের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ২২ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিনে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি জলদস্যুতা, বালুদস্যুতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলে ও মৎস্যজীবীদের জন্য ক্ষতিপূরণ, বিকল্প কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও এর পরিধি, কার্যকারিতা ও জেলেদের জীবিকার দিকটি পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
দীর্ঘদিনের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, এবার সময় কমানোর প্রস্তাব
প্রতিবছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা ঘিরে ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণ, বিক্রি ও বিনিময়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। যেমন ২০২৪ সালে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এই সময় নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়।
তবে শ্রম সংস্কার কমিশনের মতে, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জেলেদের জন্য আর্থিক ও সামাজিকভাবে বেশ কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে। তাই প্রজননের বিজ্ঞানসম্মত সময় বিশ্লেষণ করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে ১৫ দিনে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একাধিক মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা, কিন্তু সুরক্ষা কম
ইলিশের সংরক্ষণ শুধুমাত্র প্রজনন মৌসুমে নয়, বরং সারা বছরজুড়েই বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, আবার মে-জুলাই পর্যন্ত বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুরসহ কিছু এলাকায় জাটকা (ছোট ইলিশ) ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
শ্রম সংস্কার কমিশন মনে করে, এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবী মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ বা বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে জেলেদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে।
জলমহাল ইজারা বাতিল, নিবন্ধন চালুর সুপারিশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান জলমহাল ইজারা প্রথা শ্রমজীবী মৎস্যজীবীদের জন্য বৈষম্যমূলক। এর পরিবর্তে ‘লাইসেন্স বা নিবন্ধনভিত্তিক ব্যবস্থা’ চালুর সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই মাছ ধরার অধিকার পান।
কমিশন আরও বলেছে, ফিশিং ট্রলার চালকদের জন্য গেজেট বাস্তবায়ন, নিষিদ্ধ মৌসুমে বিকল্প কর্মসংস্থান, রেশনিং এবং সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা উচিত। দাদন প্রথা বিলোপে আইনগত ব্যবস্থা, বিনা সুদে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং জেলেদের ট্র্যাকিং ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা চালুরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন ও জমি বরাদ্দের দাবি
জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে মাছ ধরার ঘাটে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বরফকল নির্মাণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের জন্য আবাসন প্রকল্পে জমি বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের মতে, দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও উপকূলীয় শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, বরং একটি ব্যাপক ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা দরকার। আর তার জন্যই এই বিস্তারিত সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে।