এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত ও ব্যবসাবান্ধব: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থবছরের বাজেট বাস্তবসম্মত এবং ব্যবসাবান্ধব হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এনবিআর-এর পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সভাপতিত্ব করেন।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত হবে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশকে আরও সহজ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।” তিনি আরও জানান, দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্যও সরকার কাজ করছে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো ব্যয় নির্ধারণে ন্যায্যতা ও লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা।” তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বাজেট প্রণয়নে সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সভায় বলেন, “ব্যবসা ও বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।” তিনি বেসরকারি খাতের কাছে আরও সুনির্দিষ্ট এবং গঠনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা আহ্বান করেন, যাতে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া আরও ফলপ্রসূ হয়।
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে হলে ব্যবসায়িক খরচ কমানো, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস, সাশ্রয়ী ও গুণগত জ্বালানি সরবরাহ, স্বচ্ছতা ও সুশাসন বাস্তবায়ন এবং কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূরীকরণ অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আগামী বাজেটে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “এনবিআর এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে কর ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।” তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সেবা প্রদান এবং অভিযোগ নিরসনের জন্য সরকার ইতোমধ্যে একাধিক ডিজিটাইজেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কর ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তারা কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, শিল্প খাতে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি, রপ্তানি প্রক্রিয়ার সহজীকরণ এবং বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে এবং কর আদায় প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাবও উঠে আসে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব আলমগীর হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এই সভা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এ ধরনের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেটে এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। তবে, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় এবং মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এফবিসিসিআই এবং এনবিআর-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সভা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।