ঢাকায় মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে না ভারত

ঢাকায় আগামী ১১ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র এক মাস আগে এসে বড় ধাক্কা খেল আয়োজকরা—অংশগ্রহণকারী পাঁচ দলের একটি, ভারত, শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) একটি বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, ভারত ঠিক কী কারণে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
ভারত না থাকায় টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে চারটি দেশ
ভারতের নাম প্রত্যাহার করায় এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটান। এই চারটি দল নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে এবারের সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট।
ভারতের অনুপস্থিতি স্বভাবতই টুর্নামেন্টে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘাটতি তৈরি করবে। কারণ ভারত নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ, এবং এ প্রতিযোগিতায় তাদের রয়েছে সাফল্যের গৌরবময় ইতিহাস।
পরিবর্তন এসেছে টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও
প্রথমে পাঁচ দল নিয়ে নির্ধারিত হয়েছিল গ্রুপ পর্ব এবং সেমিফাইনাল-ফাইনালভিত্তিক ফরম্যাট। কিন্তু এখন অংশগ্রহণকারী দল কমে চার হওয়ায়, রাউন্ড-রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলা হবে।
প্রত্যেক দল অন্যদের সঙ্গে দুইবার করে মুখোমুখি হবে, অর্থাৎ প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে ম্যাচ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দল হবে চ্যাম্পিয়ন।
সাফ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের রাজত্ব
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত পাঁচটি আসরের মধ্যে চারবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। একমাত্র ২০২২ সালের ফাইনালে তারা হেরেছিল ভারতের কাছে।
এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েরা বরাবরই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে এসেছে। নিজেদের মাঠে এবার ভারতের অনুপস্থিতি তাদের শিরোপা পুনরুদ্ধারে বড় সুযোগ এনে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাফ নারী ফুটবলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভারতের সাফল্য
২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল সংস্থা।
- ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, ভারত তৃতীয়।
- এরপর ২০১৯ ও ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
- ভারত দুইবার চ্যাম্পিয়ন, একবার রানার্সআপ।
ভারতীয় নারী ফুটবলে রয়েছে বিস্তৃত অবকাঠামো ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মজুদ। তাই তাদের এই অনুপস্থিতি শুধু টুর্নামেন্টের আকর্ষণই কমাবে না, বরং পুরো প্রতিযোগিতার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেকেই।
ভারত কেন নাম প্রত্যাহার করলো?
ভারতের নাম প্রত্যাহার করার কারণ স্পষ্ট নয়। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়ানীতিগত পরিবর্তন, বা ফেডারেশনভিত্তিক টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত হতে পারে এর পেছনের কারণ।
কিছু ক্রীড়া বিশ্লেষকের মতে, ভারতের ফেডারেশন বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ও সিনিয়র দলের প্রস্তুতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই অনূর্ধ্ব-২০ দলের জন্য সময় ও সম্পদ বরাদ্দ কমে যেতে পারে।
আয়োজকদের জন্য চাপ, বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা
আয়োজকদের জন্য ভারতের অনুপস্থিতি যেমন এক দিক দিয়ে হতাশাজনক, অন্যদিকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হয়ে এসেছে।
মাঠ ও ঘরের সুবিধা, চ্যাম্পিয়নের তকমা ও ভারতের অনুপস্থিতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দল এবার ফেভারিট হিসেবে টুর্নামেন্টে নামছে।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোও হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। নেপাল ও শ্রীলঙ্কার নারী দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নতি করেছে, এবং তারা যে কোনো সময় চমক দিতে সক্ষম।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সব ম্যাচ
ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা আধুনিক ফুটবল অবকাঠামো ও আন্তর্জাতিক মানের মাঠ হিসেবে পরিচিত। আগেও এই মাঠে সাফ টুর্নামেন্টসহ আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সবগুলো ম্যাচ এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় খেলোয়াড়দের মানানসই পরিবেশে খেলার সুযোগ তৈরি হবে এবং দর্শকদের জন্যও ম্যাচ উপভোগ করা সহজ হবে।
ভারতের নাম প্রত্যাহার একটি বড় খবর, যা প্রতিযোগিতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলবে নিঃসন্দেহে। তবে এই অবস্থায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সামনে রয়েছে ইতিহাস গড়ার সুযোগ। রাউন্ড-রবিন লিগ পদ্ধতিতে আরও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে খেলোয়াড়রা, যা তাদের উন্নতির জন্য ইতিবাচক।
বাংলাদেশ যদি এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তাহলে শুধু একটি শিরোপাই নয়—দক্ষিণ এশীয় নারী ফুটবলে নিজেদের আধিপত্যও পুনরায় প্রমাণ করতে পারবে।