হজ প্রিপেইড কার্ড চালু করলো ইসলামী ব্যাংক

হজযাত্রীদের নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি ও ঝামেলা দূর করতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি চালু করেছে বিশেষ ‘হজ প্রিপেইড কার্ড’। সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এই কার্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ব্যাংকের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (চলতি দায়িত্ব) মো. ওমর ফারুক খান এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোশাররফ হোসাইন।
নগদ বহনের ঝুঁকি কমাতে আধুনিক সমাধান
ইসলামী ব্যাংকের এ উদ্যোগ হজযাত্রীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, হজ প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে অবস্থানকালীন সময়ে সহজেই মাস্টারকার্ড সমর্থিত পস (POS) মেশিনে কেনাকাটা করতে পারবেন। একই সঙ্গে মাস্টারকার্ড সমর্থিত যে-কোনো এটিএম বুথ থেকে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ উত্তোলন ও থাকা-খাওয়ার বিল পরিশোধের সুবিধাও পাবেন।
কার্ডটি ব্যবহারে আলাদা কোনো ব্যাংক হিসাব খোলার প্রয়োজন নেই। দ্রুততম সময়ে ফ্রি এন্ডোর্সমেন্ট করা যাবে এবং কার্ড ইস্যু বা বন্ধে কোনো প্রকার চার্জ ধার্য করা হবে না। তাৎক্ষণিক ব্যালেন্স রিলোডের সুবিধা এবং অব্যবহৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে।
কীভাবে পাওয়া যাবে হজ প্রিপেইড কার্ড?
হজ প্রিপেইড কার্ড সংগ্রহের জন্য হজযাত্রীদের প্রয়োজন হবে—
- বৈধ হজ ভিসার কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্টের কপি
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- দেশি সচল মোবাইল নম্বর
ব্যাংকের আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পসহ যে-কোনো শাখা ও উপশাখা থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করা যাবে। সর্বোচ্চ ১২০০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল কার্ডে লোড করা যাবে।
ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি
ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, হজযাত্রীদের সুবিধার্থে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (চলতি দায়িত্ব) মো. ওমর ফারুক খান বলেন,
“হজযাত্রীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা এই হজ প্রিপেইড কার্ড চালু করেছি। নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি এড়িয়ে বিশ্বমানের আর্থিক সেবা প্রদান করাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংক সবসময়ই গ্রাহকদের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন সেবা চালু করছে, যাতে করে আর্থিক লেনদেন আরও নিরাপদ, দ্রুত ও সহজ হয়।
সৌদি আরবে সহজ আর্থিক লেনদেনের সুবিধা
হজের সময় বিপুল সংখ্যক হজযাত্রী সৌদি আরবে যান এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও সেবার জন্য তাদের নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রথাগতভাবে নগদ অর্থ বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক সময় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হজ প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে এই সমস্যার সহজ সমাধান পাওয়া যাবে। হজযাত্রীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কার্ডে লোড করে নিয়ে যেতে পারবেন এবং যেকোনো সময় ব্যবহার করতে পারবেন।
পাশাপাশি, ব্যবহারের শেষে অব্যবহৃত অর্থ সহজেই ফেরত নেওয়া যাবে, যা গ্রাহকদের জন্য বাড়তি স্বস্তি ও সুবিধা নিশ্চিত করবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের গুরুত্ব
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
“আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের ব্যাংকিং সেবা আরও জনগণমুখী হতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের হজ প্রিপেইড কার্ড তারই একটি উদাহরণ, যা হজযাত্রীদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক সুরক্ষা দেবে।”
ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টারাও এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা চালুর আহ্বান জানান।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ইসলামী ব্যাংক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে শুধুমাত্র হজ নয়, ওমরা পালনকারী ও মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণরত অন্যান্য বাংলাদেশিদের জন্যও এই ধরনের প্রিপেইড কার্ড সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
কার্ড ব্যবহারে গ্রাহকদের কোনো প্রকার লুকায়িত চার্জ নেই এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে।
উপসংহার
হজযাত্রীদের অর্থ নিরাপত্তায় ইসলামী ব্যাংকের হজ প্রিপেইড কার্ড নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি কমানো, সহজ আর্থিক লেনদেন এবং ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে এই বিশেষ কার্ড। ইসলামী ব্যাংকের এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা যায়।