বিশ্ব

ট্রাম্পের নির্দেশে রাশিয়ার নিকটবর্তী পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন

Advertisement

বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উত্তেজনার খবর এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি তার সাম্প্রতিক এক বিতর্কিত মন্তব্য ও সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্যের জবাবে নেওয়া এক কঠোর পদক্ষেপ।

গত শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, মেদভেদেভের মন্তব্যের পর সাবমেরিন দুটির অবস্থান বদলানো হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, “দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে এখন সঠিক স্থানে রাখা হয়েছে। বোকামিপূর্ণ ও উত্তেজক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

মেদভেদেভের ‘ডেড হ্যান্ড’ মন্তব্য ও তার গুরুত্ব

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মেদভেদেভ গতকাল ট্রুথ সোশ্যালে সতর্ক করে বলেন, ‘কল্পিত ডেড হ্যান্ড কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত।’ তিনি মূলত রাশিয়ার ঠাণ্ডা যুদ্ধকালীন স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ডেড হ্যান্ড’-এর কথা উল্লেখ করেছিলেন।

‘ডেড হ্যান্ড’ হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, যদি কোনো প্রতিপক্ষ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম আঘাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাশিয়া চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হবে। এটি ছিল ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়কার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

মেদভেদেভের এই সতর্কবার্তা ট্রাম্পের জন্য এক রকম আঘাত হয়ে দাঁড়ায়। তিনি মেদভেদেভের মন্তব্যকে “উসকানিমূলক ও বোকামিপূর্ণ” বলে অভিহিত করেন এবং এর প্রেক্ষিতে সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা দেন।

ট্রাম্প ও মেদভেদেভের পারস্পরিক তোপের পটভূমি

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দিমিত্রি মেদভেদেভের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। মেদভেদেভ বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা তাকে পুতিনের খুব কাছের সহযোগী হিসেবে পরিচিত করেছে।

২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মেদভেদেভ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেই সময় পুতিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১২ সালে পুতিন প্রেসিডেন্ট পদে ফেরেন এবং মেদভেদেভ প্রধানমন্ত্রী হন। মেদভেদেভ ২০২০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

ট্রাম্প প্রায়ই রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক পদক্ষেপ ও বিশেষত ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের জন্য মেদভেদেভকে ‘যুদ্ধবাজ নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দুই নেতা তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ।

পারমাণবিক অস্ত্র ও গ্লোবাল নিরাপত্তায় নতুন সংকট

ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও গ্লোবাল নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের স্থলভাগে যুদ্ধ হলে তার প্রভাব কতটা ধ্বংসাত্মক হবে, তা সবাই জানেন। সাবমেরিন থেকে পরিচালিত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় অনেকগুণ বেশি, কারণ তা সহজে শনাক্ত ও প্রতিহত করা কঠিন।

বিশ্ব জুড়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ও শান্তি প্রক্রিয়াগুলোই এই ধরনের সংঘাত থেকে বিরত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এই উত্তেজনা পরস্পরের উপর আস্থাহীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর সংঘাত: পটভূমি

রাশিয়ার ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম জটিল ও ভয়ংকর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন প্রদান করছে, যখন রাশিয়া তার সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।

ট্রাম্পের মন্তব্য ও সাবমেরিন মোতায়েনকে এই বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর এই ধরনের উত্তেজনা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বিশ্বমঞ্চে প্রভাব ও ভবিষ্যৎ কৌশল

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বমঞ্চে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে—কিভাবে দুই সুপারপাওয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করবে? কিভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে? বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কীভাবে জোরদার করা যেতে পারে?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্প ও মেদভেদেভের মধ্যে পারস্পরিক উত্তেজনা ও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কথাবার্তা বিশ্ব শান্তির জন্য বিপজ্জনক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে যাতে পারমাণবিক প্রতিযোগিতা নতুন কোনও সংঘাতে পরিণত না হয়।

শান্তির জন্য প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সংলাপ

বিগত কয়েক দশক ধরে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা এসব প্রচেষ্টাকে অগ্রগতি থেকে বিরত রেখেছে। ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণার মাধ্যমে আবারো সেই পুরনো ভয়াবহতা ফিরে এসেছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার আন্তরিক সংলাপ, আস্থা বৃদ্ধি, ও কঠোর প্রতিরক্ষা কৌশলের পাশাপাশি কূটনৈতিক সমঝোতা। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই এখন সময় শান্তির আলোকে কাজ করার।

 MAH – 12083 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button